চার দিন পর অবসর নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল, ফিরলেন লাশ হয়ে

মাত্র তিন-চার দিন পরেই বাড়ি আসার কথা ছিল। ভাগ্য তাকে তিন দিন আগেই বাড়ি এনেছে। কিন্তু এসেছেন লাশ হয়ে! বলছি সাদেক মিয়ার (৬০) কথা। তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের কাশিপুর গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে। প্রায় ৪০ বছর ধরে ‘বাংলার সৌরভ’ জাহাজে চাকরি করতেন। তার বড় ভাই ছোয়াব মিয়াও চাকরি করতেন জাহাজে। তিনি বছর দুয়েক আগে চাকরি থেকে অবসরে যান। ছোট ভাই সাদেকের চাকরি শেষ হওয়ার কথা চলতি সপ্তাহেই। তিন-চার দিন পরেই একেবারে বাড়িতে চলে আসার কথা ছিল। আসছেনও; তবে বেঁচে নয়, লাশ হয়ে।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ওই জাহাজে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এ সময় জাহাজ থেকে অন্য নাবিকরা নিরাপদে নেমে যেতে পারলেও সাদেক মিয়া লাফ দিয়ে সাগরে পড়ার পর অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তার নিথর মরদেহ উদ্ধার করে নৌবাহিনী।

কুমিল্লার বাড়িতে চলছে দাফনের প্রস্তুতিশনিবার সকালে সাদেকের মৃত্যুর খবর শুনতে পান বাড়ির লোকজন। সেই খবর মুহূর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। নেমে আসে শোকের ছায়া। আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে খোঁড়া হয় তার কবর।

সাদেকের ছেলে মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাবা দুর্ঘটনার একঘণ্টা আগেও পরিবারের সবার সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলছিলেন। এটিই ছিল পরিবারের সঙ্গে তার শেষ কথা। অনেক অল্প বয়সে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়ি আসেন। একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। তার চাকরির বয়স শেষ। জাহাজের তেল আনলোড করা শেষ হলে চলতি সপ্তাহেই তিনি বাড়ি চলে আসতেন। কিন্তু আমাদের তিন ভাই, এক বোনকে এতিম করে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আমরা এখনও বাবার লাশ বুঝে পাইনি। লাশ পেলে জানাজার সময় জানানো যাবে।’

সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা এ খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সকালে বাবার মৃত্যুর খবর শুনে চমকে উঠি। এক ঘণ্টা আগেই তো তিনি সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন! গায়ে লাইফ জ্যাকেটও ছিল।’

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় বাংলার সৌরফ জাহাজে আগুন লাগেসাদেক মিয়ার বাল্যবন্ধু পার্শ্ববর্তী কৈরাশ গ্রামের ছায়েদুল হক বলেন, ‘সাদেক আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। খুব কম বয়সে ও জাহাজে চাকরি নেয়। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে আমি জাহাজে চাকরি করতাম। সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার পরও সাদেক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতো। সমুদ্রপথে সিঙ্গাপুর আসলে সে আমার সঙ্গে দেখা না করে যেতো না। সর্বশেষ কুমিল্লা থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে দুই বন্ধু একসঙ্গে চা পান করি, আড্ডা দিই। যাওয়ার বেলায় সে আমাকে বলেছিল, সাবধানে থাকিস। আজ সে-ই নেই। এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।’

আরও খবর: তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগায় পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে একজনের মৃত্যু