‘পলো বাওয়া উৎসব’ গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য। আগে এই উৎসব সচরাচর দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুব একটা দেখা যায় না। ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের কাইজার কোলে অনুষ্ঠিত হয়েছে পলো উৎসব। হাজারো মানুষ অংশ নেয় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে।
এক সময় গ্রাম এলাকাজুড়ে বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁশের তৈরি পলো দিয়ে নদী ও খাল-বিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ ধরতে দেখা যেতো। আর সেই অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতো গ্রামের ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ। কম বেশি প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো। আর সেই মাছ পরিবারের সবাই আনন্দ ও তৃপ্তির সঙ্গে খেতো। কিন্তু সেই বাংলার ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নেই নদী-নালায় পানি, যতটুকু আছে সেখানে অসাধু মাছ শিকারিরা চায়না দুয়ারি, কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে ছোট মাছগুলো মেরে দেশি মাছের বংশবিস্তারে বাধা সৃষ্টি করছে।
শুক্রবার সকাল ৮টায় ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর কাইজার বিলে পলো উৎসবের আয়োজন করে স্থানীয় যুবসমাজ। পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব দেখতে কোলের পাশের চারপাশের রাস্তায় অবস্থান নেয় বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এ ধরনের উৎসবে এসে খুশি তারা।
মাছ ধরতে আসা আবুল বাশার বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ছোটবেলায় পলো দিয়ে মাছ ধরতাম। বহুবছর পর পলো নিয়ে মাছ ধরতে এসেছি। আসলে মাছ না পেলেও অনেক আনন্দ করতে পেরেছি।’
লিটন বিশ্বাস বলেন, ‘মাইকিং শুনে এখানে এসেছি। অনেক মানুষ এসেছে মাছ ধরতে, খুবই ভালো লাগছে। অনেকদিন এভাবে মাছ ধরিনি। প্রতি বছর এই ধরনের আয়োজন করা হলে ভালো হবে।’
মাছ ধরা দেখতে এসেছেন গৃহবধূ বৃষ্টি আক্তার। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় কখনও পলো দিয়ে মাছ ধরতে দেখিনি, জীবনে প্রথমবারের মতো পলো দিয়ে অনেক মানুষের মাছ মারা দেখতে পেলাম। খুবই ভালো লেগেছে।’
আয়োজকরা দাবি করেন, স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল বা চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশি মাছ শিকার বন্ধ করলে সেসব মাছ রক্ষা পেতো।
পলো উৎসবের আয়োজক মুরাদ হোসেন জানান, গত দুই দিন ধরে পলো উৎসবের মাইকিং করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া এমন উৎসবে যোগ দিয়েছেন হাজারো মানুষ। এই কোলে কারেন্ট জাল, ভেসাল ও চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশে প্রজাতির মাছ। দেশি মাছ রক্ষায় প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় থাকলে আমাদের খাল-বিলগুলো আবার মাছে ভরে উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর যাতে এ ধরনের আয়োজন করতে পারি, সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য পলো উৎসব ধরে রাখতে প্রতি বছর আয়োজন করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।