সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে হুমকি দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ও বিএন‌পি নেতা অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ার ব্যর্থতা ও ক্ষোভে আইনজীবী ভবনে অবস্থিত নবনিযুক্ত পিপির সেরেস্তা ভাঙচুরের ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করায় মঙ্গলবার (১৯ ন‌ভেম্বর) রাত সোয়া ১০টার দিকে সাংবাদিক রিগানকে ফোনে এই হুমকি দেন তিনি। যার অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।

অ‌্যাড‌ভো‌কেট ফখরুল অশালীন ভাষায় হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুমি কী ভাবছো আমাকে? তুমি যত বড় রিপোর্টার হও না কেন, আমি....ফালাই না। আমিও পেশাজীবী। আমি অ্যাডভোকেট। এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে। কয়দিনের সাংবাদিক হইছো হে তুমি! তুমি রিপোর্ট করছো!’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী ভবনে (লাল ঘর) নব নিয়োগকৃত পিপি অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদের সেরেস্তা ভাঙচুর করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ও বজলুর রশিদের এক সময়ের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা। এমন অভিযোগ পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। যার ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিক আরিফের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ভিডিওতে ফখরুল ইসলামকে ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

অ্যাডভোকেট ফখরুল সাংবাদিক আরিফকে ফোন করে সংবাদ প্রকাশের জন্য কৈফিয়ত দাবি করেন। তার নেতৃত্বে ভাঙচুরের কোনও অভিযোগ প্রতিবেদকের কাছে আছে কিনা জানতে চান। তিনি সাংবাদিক আরিফকে মামলার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে ভাঙচুর হয়েছে এরকম কোনও অভিযোগ তোমার কাছে আছে? তুমি একতরফাভাবে নিউজ করবা? তোমার রিপোর্টে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি কাল তোমার বিরুদ্ধে একটা নোটিশ পাঠাবো। তুমি এ রিপোর্ট সংশোধন করবা। নয়তো তোমার বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো।’

‘আপনি হুমকি দিচ্ছেন?’ সাংবাদিক রিগানের এমন প্রশ্নের পর আরও উত্তেজিত হন ফখরুল। তিনি অসংলগ্ন কতাবার্তা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘তুমি চাঁদাবাজি করো? হলুদ সাংবাদিকতা করো? তোমার আয়ের উৎস কী? তোমার পড়ালেখা কী? চাঁদাবাজি না করলে তুমি কী করে খাও?’

এ ধরনের কথাবার্তা না বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘তুমি সীমা লঙ্ঘন করো না। আমি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করবো।’

অ্যাডভোকেট ফখরুলের এমন হুমকির প্রতিউত্তরে সাংবাদিক রিগান তাকে বলেন, ‘আমি তথ্য যা পেয়েছি, তাই সংবাদ করেছি। আমি আমার ইথিক্স মেনে সংবাদ প্রতিবেদন করে পাঠিয়েছি। আমার অফিস সেটাকে প্রকাশযোগ্য মনে করেই সেটা প্রকাশ করেছে। আপনি যদি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান আমি সম্মানের সঙ্গে সেটা গ্রহণ করবো। আপনি সংবাদে সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদ দিতে পারেন। কিন্তু আপনি এভাবে হুমকি দিতে পারেন না।’

এরপর ফখরুল বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মামলা করবো।’

সোমবার (১৮ নভেম্বর) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত আদেশে অ্যাডভোকেট মো. বজলুর রশিদকে কুড়িগ্রাম জেলা দায়রা ও জজ আদালতের পিপি এবং অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান সরকারকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। একই আদেশে অ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলামকে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদকে নতুন পিপি নিয়োগের খবরে মঙ্গলবার দুপুরে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি তার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে আইনজীবী ভবনে নতুন পিপি বজলুর রশিদের সেরেস্তা ভাঙচুর করেন। তার টেবিল বাইরে বের করে ফেলে দেন।

নবনিযুক্ত পিপি বজলুর রশিদ বলেন, ‘মঙ্গলব‌ার দুপুরে অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম আকস্মিক আরও কয়েকজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আইনজীবী ভবনে আমার ব্যক্তিগত সেরেস্তা ভাঙচুর করেন। তার সঙ্গে অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম, আশরাফ আলী ও আলতাফুরসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। তারা আমার টেবিল ভাঙচুর করে বাইরে বের করে ফেলে দেন। এটি কোনও সভ্য আচরণ হতে পারে না। তিনি কমান্ডো স্টাইলে ভাঙচুর করেছেন। আমি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

ফখরুল ইসলামের এমন কর্মকাণ্ডে ‌ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ ক‌রে‌ছেন জেলা বা‌রের আইনজীবীরা।