কাজী ফার্মসের কর্মীদের ওপর হামলা

চট্টগ্রামে মন্ত্রীপুত্রের ভূমিদখলের পাঁয়তারা

দেশের সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস লিমিটেডের চট্টগ্রামের দোহাজারীতে অবস্থিত একটি বৃহৎ খামারের জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মন্ত্রীর ছেলে মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তার ক্যাডাররা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে অবস্থিত ওই পোল্ট্রি খামারের জায়গা বুধবার দখলের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা দোহাজারী কাজী পোল্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) শেখ মাসুমুল হাসানসহ সাত কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

দোহাজারীতে কাজী ফার্মসের কর্মকর্তার ওপরে হামলা-১

সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসুমুল হাসান জানিয়েছেন, সানোয়ারা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে উস্কানি দিয়ে কাজী ফার্মসের ওই প্রকল্পের জায়গা দখলে বারবার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, কাজী পোল্ট্রির দোহাজারী খামার প্রকল্পের পাশে মন্ত্রীর ছেলে মুজিবুরের আরেকটি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে কাজী ফার্মস প্রকল্পের কিছু জায়গা তাদের খামারে যুক্ত করতে চাপ দিচ্ছিলেন মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর। কিন্তু কাজী ফার্মসের কর্মকর্তারা এতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর সহায়তায় ওই জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ বুধবার সকালেও তারা এ চেষ্টা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে কাজী ফার্মসে ৬ জন পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়।   

মাসুমুল হাসান বলেন, ‘সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কয়েকশ’ মানুষ লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তখন আমি সেখানেই উপস্থিত ছিলাম। তারা আমার মাথায় আঘাত করে, তবে হেলমেট পরিহিত থাকায় বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা পাই।’ তিনি আরও জানান, তিনি হাতেও ব্যাথা পেয়েছেন এবং তার ফার্মের আরও ছয় কর্মী আহত হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি জানানো হলেও তারা অনেক দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

মাসুমুল আরও জানান, নাসির মেম্বর নামে মুজিবুরের এক ক্যাডার এই হামলায় নেতৃত্ব দেন। এর আগেও ওই ব্যক্তি ফার্মের কর্মীদের মারধর করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দোহাজারীতে কাজী ফার্মসের কর্মকর্তার ওপরে হামলা-২

বুধবারের হামলায় যারা অংশ নেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে আবু সওদাগর নামের এক ব্যক্তি লাঠি হাতে বুধবারের হামলায় নেতৃত্ব দেন। দোহাজারীর এই ব্যক্তির বাবার নাম  ইসহাক ফকির বলে জানা গেছে। এ হামলায় অংশ নেওয়া অন্যরা হচ্ছেন সোলায়মান, জিকু, কেয়াফত, নুরুল কবীর, কায়সার, মহিউদ্দিন, নাসিরুদ্দিন, বাহারমিয়া প্রমুখ। 

চান্দানাইশ পুলিশের ওসি গাজী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, সংবাদ পাওয়ার পরপরই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওসি বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষকেই এই বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে নিতে বলেছি।’

এর আগে গত বছরের ২১ ও ২৪ মে ওই দখলদারেরাই ফার্মে হামলা চালিয়ে ৫ কর্মীকে আহত করেছিল বলে পুলিশ এবং ফার্ম সূত্রে জানা যায়। পুলিশ স্টেশন থেকে জানা গেছে, ২৪ তারিখের হামলার পর কাজী ফার্মসের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স এক্সিকিউটিভ আবদুল মোতালেব খান পুলিশ পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে একটি জিডি নথিভুক্ত করেছিলেন।

জিডিতে বলা হয়, দুই বছর আগে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন দোহাজারির সানওয়ারা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের কাছ থেকে কাজী ফার্মস ১১৩ একর জমি ক্রয় করে। 

দোহাজারী কাজী পোল্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) শেখ মাসুমুল হাসান বলেন, ‘ওই এলাকায় বিক্রেতা ফার্মের প্রায় ৩২০ একর জমি ছিল, এসব জমির বেশিরভাগেই দালিলিক জটিলতা রয়েছে। আমাদের কোম্পানি শুধুমাত্র যেটুকু জমির কাগজপত্র ঠিক ছিল, সেটুকুই কিনেছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় মুজিবুর তার কাছে জমি বিক্রি করার জন্য আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে, যা আইন বহির্ভূত। আর এজন্য তারা আমাদের কাছে বিকৃত জমি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য হামলা চালাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মন্ত্রী নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন সানওয়ারা গ্রুপের লোকজন এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যাতে আমরা সেখানে কোনও নির্মাণ কাজ না করতে পারি। এর আগে গেইট সংলগ্ন জমির অংশ আমরা ক্রয় করিনি বলে উল্লেখ করে আমাদের গেইট আটকে রেখেছিল। এছাড়াও গত বছরের মে মাসে আমি ছুটিতে থাকা অবস্থায় তারা আমাদের অফিস বিল্ডিংয়ে দিনভর তালা ঝুলিয়ে রাখে।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সানওয়ারা পোল্ট্রি হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।   

/এসএ/টিএন/