কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের সব কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কারা অধিদফতরের ১৪তম ব্যাচের ডেপুটি জেলার এবং ৬২তম ব্যাচের কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সংস্কারমুখী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা কারাগারকে একটি সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

‘বন্দিকে অপরাধী নয়, সংশোধনযোগ্য মানুষ হিসেবে দেখা– এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠার জন্যই সরকারের পক্ষ থেকে “সংশোধনমূলক শিল্পপার্ক” তৈরিসহ নানাবিধ উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে বন্দিরা প্রশিক্ষিত হয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পাশাপাশি জেলে বসেই আয়-রোজগারের সুবিধা পাবেন এবং পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারবেন।’

কারারক্ষীদের মাঠ পর্যায়ের চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কারারক্ষীরাই সরাসরি বন্দিদের সঙ্গে কাজ করেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, মানবিক আচরণ প্রদর্শন করেন। এ দায়িত্ব পালন করতে হয় ধৈর্য, সাহস ও পেশাগত নিষ্ঠার সঙ্গে। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কেবল পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি সততা, দেশপ্রেম ও নৈতিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া।’

তিনি এ সময় নবীন ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ডেপুটি জেলাররা কারাগারের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কারা প্রশাসন গঠনে তারাই প্রধান বাহক। নবীন ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতিমুক্তভাবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কারা বিভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক মানের কারা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেজন্য বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করতে মোবাইল জ্যামার, পৃথক ইন্টারনেট সিস্টেম, বডিস্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, সার্কিট ডিটেক্টরসহ নানা ধরনের আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার কারারক্ষীদের সাহসিকতা এবং কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জেল মেডেল প্রবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য সংস্থার মতো অবসরগামী কারা সদস্যদের আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে নবীন ডেপুটি জেলার, কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

এ সময় কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট মো. কামাল হোসেনসহ বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দফতর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৪তম ব্যাচের ডেপুটি জেলারদের মধ্যে সর্ব বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন খাদিজা খাতুন লিমা এবং বেস্ট ফায়ারার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ডিএম নুসরাত আল ইসলাম এবং ৬২তম ব্যাচ কারারক্ষী ও নারী কারারক্ষীদের মধ্যে সর্ববিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন সুব্রত চন্দ্র সরকার ও বেস্ট ফায়ারার খ্যাতি অর্জন করেন রায়হান মিয়া।

পরে উপদেষ্টা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন।