এদিকে বেশি সরবরাহের কারণে ইলিশের দামও অনেক কমেছে, ক্রেতারাও বেশ খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। আড়তগুলোতে ঢাকা-বরিশাল ও চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা অনেক। কেনা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়তঘরের সামনে ককশিটের প্যাকেট স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
মাছঘাটে কথা হয় স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে। তারা জানান, গত ১০/১৫ দিন থেকে বঙ্গোপসাগর এবং মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। শীত মৌসুমে ভোলার নদীতে এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির আর নেই।
ভোলার নাছির মাঝি মাছের ঘাটের আড়তদার সিরাজ হাওলাদার বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সাগর ও নদীতে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে শীত মৌসুমেও জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে বর্ষার মতো শীতে ইলিশের বেশি চাহিদা না থাকায় এবং আমদানি বেশি হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে।
ভোলার জংশন চডারমাথা, তুলাতুলি, নাছির মাঝি, কোঁড়ারহাট, স্লুইসগেট, চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া মৎস্যঘাট, দুলারহাট, ঢালচর, কুকরিমুকরি, দক্ষিণ আইচা ও শশীভূষণ বাজার ইলিশের ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে এখন সরগরম।
বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় মাছের মোকাম পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী জানান, ‘মৌসুমে এবার ইলিশ তেমন মেলেনি। এ জন্য জেলে-ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখেননি। কিন্তু শীত মৌসুমে অসময়ে ইলিশের আমদানি আমাদের সব কষ্ট মুছে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, নদীতে ইলিশ প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবৈধ খুটাজাল, বিন্দিজালসহ সব ধরনের অবৈধ জাল ও অবৈধ মৎস্য শিকারিদের সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি আগামীতে ভোলাকে ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ইলিশ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইকো ফিশের ভোলা জেলায় কর্মরত গবেষণা সহযোগী অংকুর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং বঙ্গোপসাগর ও সাগর মোহনার নদীতে ইলিশের দ্বিতীয় প্রজনন মৌসুমে ( জানুয়ারি- মার্চ) মা-ইলিশের বড় একটি অংশ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ডিম ছাড়ায় এবার ভোলার সাগর মোহনার মেঘনা-তেতুলিয়ায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করায় এবং জাটকা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হওয়ায় তুলনামূলক বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।