আদালত সূত্রে জানা গেছে, পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আদালতে রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির যুক্তিতর্ক শুরু হয় বরগুনার শিশু আদালতে। এর আগে আদালতে হাজির হয় এই মামলায় জামিনে থাকা ৮ আসামি। পুলিশ ভ্যানে বরগুনা জেলা কারাগারে থাকা ৬ আসামিকেও আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের বিচারকের কাছে রাষ্ট্রপক্ষ ৭ আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির পর্যালোচনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
রিফাত হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলো—মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ্ ওরফে রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ্ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭), মো. নাজমুল হাসান (১৪), মো. রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল শিকদার জয় (১৬) ও মো. আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ত ১০ আসামির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। আজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু হয়েছে। এ মামলায় আদালতে ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে।’
গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। ওই হত্যাকাণ্ড সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ একে একে গ্রেফতার করেন এজাহারভুক্ত আসামিদের। রিফাতের ওপর হামলার ছয় দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন এ মামলার আলোচিত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ছয় দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ৬ প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন—রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।