জমি বণ্টনের জেরে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

জমি বণ্টন নিয়ে বিরোধের জেরে বরগুনায় ছেলের বিরুদ্ধে বাবাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে জামাল মীরকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার বরগুনা সদর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম আয়নাল হোসেন (৭০)। তিনি বরগুনা সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হেউলিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন কৃষক ছিলেন। দুই স্ত্রীর সংসারে তার তিন ছেলে ও চার মেয়ে।

নিহতের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছেলে আলম মীর জানান, নিহত আয়নাল মীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ও সন্তানদের সঙ্গেই বসবাস করতেন। গতবছরের মাঝামাঝি প্রথম পক্ষের সন্তানরা আয়নাল মীরকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সন্তানদের মধ্যে জমিজমা বণ্টন করে দেন আয়নাল। এসময় সিদ্ধান্ত হয়, বাবা আয়নাল মীরকে ছেলেরা একমাস করে ভরন পোষণের দায়িত্ব নেবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমি বণ্টন ও বাবার ভরন পোষণের দায়িত্ব অন্য ছেলেরা মেনে নিলেও দ্বিতীয় পক্ষের ছোট ছেলে জামাল মীরের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। মুগডালের মৌসুমে জামাল মুগডাল চাষ করতে চাইলে ভরন পোষণ না দেওয়ায় বাবা আয়নাল ছেলে জামালকে মুগডাল চাষ করতে দেননি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল জামাল। অন্য ভাইয়েদের ক্ষেত থেকে মুগডাল তুলতে দেখে জামালের মনে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধে।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে জামাল তার বাবা আয়নালকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। এসময় তিনি লুটিয়ে মাটিতে পড়ে যান। বাবাকে পেটানোর পর জামাল অন্য ভাইদের ডেকে, ‘তোগো জমি এহন তোরা খা, আমি গেলাম’ বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এতে সন্দেহ হওয়ায় মুগডাল ক্ষেত থেকে নিহতের ছেলেরা ছুটে বাড়িতে এসে আহত আয়নালকে বরগুনা সদর হাসপাতাল নিয়ে আসেন। জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পরপরই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে জামালকে আটক করা হয়েছে। জামাল পেশায় একজন লোকগান শিল্পী। এছাড়া তিনি আর কোনো কাজ করতেন না। ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও বাবাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে ছেলে জামাল। অন্য ভাইয়েরা মেনে নিলেও জমি বণ্টন নিয়ে জামালের মধ্যে বাবার প্রতি ক্ষোভ ছিল। এর জেরে সে বাবাকে শাবল দিয়ে পিটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত ছেলে জামাল মীরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর নিহত বৃদ্ধ আয়নাল মীরের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।