কিশোরীকে বিয়ে করা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সমন জারি

সালিশ বৈঠক ডেকে কিশোরীকে বিয়ে করা ঘটনায় করা মামলায় পটুয়াখালীর বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. জামাল হোসেন সমন জারি করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আল আমিন হাওলাদার বলেন, গত ২৫ জুন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ওই কিশোরীকে (১৪) বিয়ে করেন। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদে বাদীর ভাইকে মারধর করেছেন তিনি। আদালতে জমা দেওয়া পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

এর আগে রবিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে একই আদালতে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

আদালতে দেওয়া ৭২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে কিশোরীকে জোরপূর্বক বিয়ের প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। সোমবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালী পিবিআইর পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এম এ সোবাহান খান।

তিনি বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। মামলায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। এখন বিষয়টি আদালত দেখবেন।

চলতি বছরের ২৮ জুন চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে পটুয়াখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন এক যুবক। মামলায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাদীর পরিবারের লোকজনকে মারধর এবং তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর বাল্যবিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। 

বিষয়টি পিবিআই-কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। 

মামলার আসামি হলেন, চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার, তার সহযোগী মো. শাহাবুদ্দিন হাওলাদার, পলাশ হাওলাদার, সুজন হাওলাদার, মো. নুরুল আমিন বাবু, আবু সাদেক ও কনকদিয়া ইউনিয়নের কাজি মো. আইয়ুব।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, বাদীর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। গোপনে তারা বিয়েও করে। বিষয়টি জানাজানি হলে কিশোরীর বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় পারিবারিকভাবে তারা বিয়ে করতে পারেনি। কথা ছিল প্রাপ্তবয়স্ক হলে পারিবারিকভাবে বিয়ে করবে। এ নিয়ে উভয়ের পরিবারে টানাহেঁচড়া চলছিল। এর ফাঁকে গত ২৪ জুন প্রেমিক যুগল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এই খবর কিশোরীর বাবা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। ২৫ জুন সকালে প্রেমিক যুগলসহ তাদের পরিবারের সবাইকে সালিশের জন্য চেয়ারম্যানের বাড়িতে হাজির হতে বলেন। সবাই উপস্থিত হলে সেখানে সালিশ শুরু হয়। সালিশে বাদীর ছোট ভাইকে গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

মামলার বাদী বলেন, একপর্যায়ে সেখান থেকে কিশোরীকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যান চেয়ারম্যান শাহিন। পরে লোকমুখে শুনতে পাই, চেয়ারম্যান তার ভাইয়ের প্রেমিকাকে ওই দিনই বিয়ে করেছেন। এ ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে পরদিন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান কিশোরীর কাছ থেকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। পরে কিশোরীকে তার প্রেমিকের সঙ্গে জোর করে আবার বিয়ে দেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

মামলার বাদী বলেন, ঘটনার পর চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমাদের মারধর করেছেন। চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এলাকাছাড়া করার। উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা করি।