আসপিয়ার জন্য নির্মাণ হচ্ছে ঘর

ভূমির মালিক না হওয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে আসপিয়া ইসলামের চাকরি পেতে তৈরি হয়েছে জটিলতা। তাকে চাকরি, জমি ও ঘর দিতেই কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। বরিশালের হিজলা উপজেলার ক্ষুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে দ্রুতগতিতে চলছে আসপিয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নির্মাণকাজ। একইসঙ্গে চলছে জমিসহ ঘরের দলিল দেওয়ার কার্যক্রমও। জমি পেলেই নিশ্চিত হয়েছে যাবে হতভাগা এই তরুণীর চাকরি।

উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে আসপিয়া বলেন, ‘শুক্রবার জমি নির্ধারণ হওয়ার পর তড়িঘড়ি সেখানকার জমিটুকু পরিষ্কার করে দুদিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে। খবর পেয়ে মা এবং বোনকে নিয়ে কাজ দেখে এসেছি। খুব ভালো মানের ইট দিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। সামনে বারান্দা, পেছনের দুটি রুমের পেছনে থাকছে রান্নাঘর ও টয়লেট। ওপরে থাকবে একচালা টিন। এরপরও জমি থাকবে। ওই ঘরে আমাদের পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার একটি ঘর পাচ্ছে, এটা যে কত আনন্দের। সবাই বলছে, চাকরির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বোনাস পাচ্ছি। এ জন্য আমি ও আমার পরিবার সাংবাদিকদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। কারণ, তারা ছাড়া এতদূর যাওয়া সম্ভব হতো না। বিশেষ করে বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি বেশি কৃতজ্ঞ। তাদের নিউজটি সর্বপ্রথম প্রকাশ পায়। এরপর দেশে যত মিডিয়া আছে তারা নিউজ প্রকাশ করে। একটা খবরের যে এত জোর তা আমার জানা ছিল না। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার চাকরি আর হচ্ছে না। কিন্তু এখন দেখছি আল্লাহ আমাকে চাকরির সঙ্গে ঘরও দিচ্ছেন। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

আসপিয়ার মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘যেখানে মেয়ের জমির জন্য চাকরি হবে না, সেখানে চাকরি ও ঘর দুটিই হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। পূর্বে যে আঘাত পেয়েছিলাম, তা আমি ও আমার মেয়ে কাটিয়ে উঠেছি। আসলে দরিদ্র পরিবারে আর্থিক সংকট যে কতটা সমস্যায় ফেলে তা বোঝাতে পারবো না। এ জন্য মেয়ের চাকরিটা পাওয়ার বিষয়টি যখন শুনি, তখন আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য খুশি হয়েছে। একইসঙ্গে আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশী সবাই বলতো কবে মিষ্টি খাওয়াবেন? এরই মধ্যে মাথায় বাজ পড়ার মতো খবর এলো।’

‘মেয়েকে কী সান্ত্বনা দেবো, আমি নিজেকে কীভাবে সামলাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আসলে যতটুকু বুঝেছি, সাংবাদিকরাই আমার মেয়ের চাকরির জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাদের মাধ্যমে প্রশাসন জানতে পেরে তারাও আমাদের অনেক উপকার করছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিচ্ছেন। ওই ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। ঘরের কাজ দেখে এসেছি। ভালো লাগে যখন মনে করি, নিজেদের একটি বাড়ির সঙ্গে মেয়ের চাকরি হচ্ছে।’

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর তৃতীয় ধাপের আওতায় উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ক্ষুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে আসপিয়ার জন্য দুই শতাংশ জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই জমিতে দ্রুতগতিতে চলছে ঘর নির্মাণ। ঘর নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ওই জমি-ঘরের দলিল করার কার্যক্রম। ইচ্ছা আছে এ সপ্তাহের মধ্যেই দলিলের কাজ শেষ করা। সেভাবেই কাজ এগোচ্ছে। আর যত দ্রুত সম্ভব ঘরের নির্মাণকাজও শেষ হবে।’

পুলিশ কনস্টেবল পদে সফলভাবে ছয়টি স্তর পার হওয়ার পর সবশেষ ২৯ নভেম্বর ভাইভায় উত্তীর্ণ সবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। এতে চাকরির স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আসপিয়ার। এ জন্য গত বুধবার আসপিয়া ডিআইজি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও কোনও সমাধান না হওয়ায় বরিশাল পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকেন। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে খবর প্রকাশিত হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একইসঙ্গে সরকার থেকে শুরু করে সবার সহানুভূতি পান আসপিয়া। এখন তাকে জমি দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে সরকার থেকেই।