দগ্ধ অবস্থায়ও শিশুটিকে জড়িয়ে ছিলেন নারী, শায়িত হলেন একই কবরে 

একটি শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছেন এক নারী। সেই অবস্থাতেই লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা। ঝালকাঠী জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে সেভাবেই হস্তান্তর করা হয়েছিল তাদের। আর সেই অবস্থাতেই শনিবার চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দুজন একই কবরে। এখনও পরিচয় মেলেনি তাদের, কিন্তু প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা দুজনে মা ও মেয়ে।

দৃশ্যটি দেখে অনেকেই চোখের জল ফেলেছেন। কেঁদে ফেলেছিলেন দাফনের দায়িত্বে থাকা সেচ্ছাসেবীরাও।

শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া দুইটার দিকে পোটকাখালী গণকবরে অজ্ঞাতদের দাফন করা হয়। এখানকার প্রথম কবরটিতেই তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশের কফিনের ওপরে লেখা হয়েছে মা ও মেয়ের লাশ।

গণকবরে লাশ দাফন দেখতে আসা মোস্তাফিজ নামের এক যুবক বলেন, ‘এমন করুণ পরিস্থিতি কখনোই দেখিনি, এক কবরে মা ও মেয়েকে দাফন দেওয়া। জীবনের প্রথম এই করুন বিভীষিকাময় সময়ের স্বাক্ষী হয়ে রইলাম। এমন করুন মৃত্য যেন শত্রুরও না হয়।’

সোহেল রানা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি, সিডরের সময় এক কবরে অনেককে দাফন দেওয়া হয়েছিল। আজ নিজের চোখে মা ও মেয়েকে এক কবরে শায়িত হতে দেখলাম। এটা মানব হৃদয়ে যে দাগ ফেলেছে হয়তো কোনোদিনও ভোলা সম্ভব নয়। আল্লাহ যেন আর কোনও মানুষকে এ রকম মৃত্যু না দেয়।’

লাশ দাফনের কাজে নিয়োজিত বরগুনা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্য মুসা বলেন, ‘যাদের লাশ দাফন হয়েছে তাদের পরিচয় জানি না, কিন্তু এটা অনুমান করতে পেরেছি নিজের সন্তানকে বাঁচাতে এক মা কীভাবে চেষ্টা করেছেন। যেভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন আমরা সেভাবেই এই দুজনকে দাফন করেছি।’

ঝালকাঠী জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাশ বুঝে পাওয়ার পরপরই নিখোঁজদের খুঁজে পেতে বরগুনা জেলা প্রশাসন মাইকিং করলেও তাদের সন্ধানে কেউ আসেনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তাই বাধ্য হয়েই অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে তাদের।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জড়ানো অবস্থায় লাশ দুটি পাওয়া যায় বলে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন। আমাদেরও এমনটি ধারণা যে ওই কফিনে রাখা লাশ দুটি সম্পর্ক মা-মেয়ে। যেহেতু তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়নি, তাই এক কবরেই দাফন করা হয়েছে। তাদের নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।’ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানা যাবে বলেও তিনি জানান।