আরিফের লাশ ফেরত আনার দাবি স্বজনদের 

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় নিহত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফের লাশ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার স্বজন ও স্থানীয়রা। স্বজনদের দাবি, আরিফের লাশ যেন ফিরিয়ে আনতে সরকার পদক্ষেপ নেয়। 

নিহতের ভাই তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন, আমার ভাই মারা গেছে দেশের জন্য। সরকারের কাছে এখন একটাই দাবি, আমার ভাইয়ের লাশটা যেন ফিরিয়ে আনা হয়। 

ইউক্রেন থেকে সকালেও ফোন করেছিলেন আরিফ, বলেছিলেন স্বপ্নের কথা

বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে তো আর নেই। আমাদের বাঁচার অবলম্বনটুকু চলে গেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ও মমতাময়ী মা শেখ হাসিনার কাছে আমার ছেলের লাশটা ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাই। 

আরিফের মা আমেনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে। আমি তারে একটু দেখবো।

আরিফ সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। তবে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বুধবার বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। জানিয়েছিলেন, আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। আরিফ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল মেজো। 

বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আরিফ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রাম মেরিন অ্যাকাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল।’

আরিফের স্বজনরা জানান, আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করছিলেন তিনি। বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন তিনি। প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলার সময় হাদিসুরের প্রান্তে বিকট শব্দ হয়। সে সময় আরিফের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না আরিফের

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা নিহতের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা দেশের বাইরে। তাই তার লাশ ফেরত আনার বিষয়ে যে প্রক্রিয়া সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। আপনারা একটু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাত হয়। সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।