ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’: ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’-তে পরিণত হয়েছে। এটি রবিবার (৮ মে) দুপুর ১২টায় পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এদিকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পায়রা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।  

পটুয়াখালী আবহাওয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় অশনিতে রূপ নিয়েছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। তবে এটি কোন সময় কোন এলাকায় আঘাত হানবে সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।  

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই পায়রা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

অশনির প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। এছাড়া আকাশে রয়েছে ঘন মেঘের আনাগোনা। উপকূল এলাকার আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তবে বাতাসের চাপ কিংবা নদ-নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। জেলার অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল এখনও ঘরে তুলতে পারেননি।  

গলাচিপার বাউরিয়া এলাকার কৃষক ইউনুস বলেন, শুনেছি ঘূর্ণিঝড় আসছে। আমার প্রায় এক কানি (১৬০ শতাংশ) জমিতে পাকা মুগডাল রয়েছে। ইচ্ছা ছিল ঘূর্ণিঝড় আসার আগে মুগডাল তুলে ঘরে উঠাবো। কিন্তু শ্রমিক সংকটে কি যে করবো ভেবে পাচ্ছি না। ঘূর্ণিঝড় আসার আগে ডাল ঘরে তুলতে না পারলে এত কষ্টের ফসল সব ভেসে যাবে। 

একই উপজেলার সুহরি ব্রিজ এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমর চার একর জমিতে বোরো ধান রয়েছে। কিন্তু কাটার মতো উপযুক্ত সময় হয়নি। ঘূর্ণিঝড় এলে আমার ধান নষ্ট হয়ে যাবে।  

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, পত্রিকায় খবর দেখে জেলেদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় অশনি সম্পর্কে কোনও নির্দেশনা পাইনি। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে জেলেদের জানিয়ে দেওয়া হবে। 

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক একেএম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের লোক মাঠে আছেন। তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কৃষকরা ৫০ শতাংশ মুগডাল ঘরে তুলেছেন। বাকি ডাল দ্রুত তোলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশ ধান পেকেছে, এমন বোরো জমির ধান কেটে ঘরে তোলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।   

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, চার নম্বর সতর্কতা সংকেত পাওয়ার পরে আমাদের প্রস্তুতি সভা হবে। তারপরও আমরা ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ পর্যবেক্ষণ করছি।