বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ক্রমেই উপকূলের দিকে আসছে। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ও বজ্রাঘাত হচ্ছে। লঘুচাপটি নিম্নচাপ হয়ে যেকোনও সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নোয়াখালীর হাতিয়াসহ দেশের উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এই খবরে দুশ্চিন্তায় আছেন উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ।
বুধবার (২৮ মে) দুপুর থেকে বৈরী আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নিঝুম দ্বীপ।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, নোয়াখালীর উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নে মূল ভূখণ্ডের বাইরে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টির বেশি নতুন করে চর জেগেছে। নতুন করে জেগে ওঠা এসব চরের বেশ কিছু স্থানে মানুষজন বসবাস শুরু করেছে।
এসব চরের মধ্যে চর গাসিয়ায় ১৫ হাজার, ঢাল চরে ৫ হাজার, নিঝুম দ্বীপে ৪০ হাজার, চর আতাউরে ৩ হাজার ও দমার চরে ১ হাজারের মতো মানুষ বসবাস করেন। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক হাতিয়ার ভাসান চরে বসবাসরত।
এ ছাড়া, জাগলার চর, চর কবিরা, চর কামাল, চর গাঙ্গুরিয়া, ইসলাম চর, চর মোহাম্মদ আলী, চরজোনাক, চরগাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চরওছখালিসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার পাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় পশুগুলোর।
জোয়ারে অনেক গবাদিপশু ভেসে যায়। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ করলেও ফলন মিলে একবার। নতুন জেগে ওঠা এসব চরের একটিতেও নেই কোনও বেড়িবাঁধ। ফলে দুর্যোগের নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকেন চরের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্য উপকূলীয় ৪টি উপজেলা ৩২৫ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৭ কিলোমিটার বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধগুলোর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর ইউনিয়নের ১.৫৮ কিলোমিটার ও হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া, তমরুদ্দি ও বুড়িরচর ইউনিয়নের ৩.৭৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। বাকি ১.৬৪ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগ মুহূর্তে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার ঝুঁকি কমছে না, বরং বাড়ছে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সালেহী জানান, উপকূলীয় এলাকার বিশেষ করে হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। অবশিষ্ট অংশগুলো ও দ্রুত সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয় সবসময় নজরদারিতে রাখবে বলে জানান তিনি।