বিয়েবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ২ যুবকের মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় মামলায়

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিয়েবাড়িতে কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে ভুক্তভোগী তুহিন হাওলাদার বাদী হয়ে গলাচিপা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

মামলায় চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু সায়েম গাজীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও হাদি হাওলাদার ও হযরত হাওলাদার নামে আরও দুজনকে আসামি করেছেন বাদী।

বিচারক মো. মামুনুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী দুই আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. হাসান সরদার জানান, মঙ্গলবার (৭ জুন) চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আবাসনে একটি বিয়ে বাড়িতে যায় একই এলাকার ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে তুহিন মিয়া ও লিটন গাজীর ছেলে কালু গাজী। এ সময় তারা একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলে। এই নিয়ে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায় ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সায়েম গাজীর অস্থায়ী কার্যালয় নমো স্লুইসগেট বাজারে। পরে ওই দুই যুবককে জিজ্ঞাসা শেষে স্থানীয় বাজারের জনসাধারণের সামনে ইউপি সদস্য সায়েম  গাজীর নির্দেশে মাঝি ও হাদী হাওলাদার মিলে তাদের মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা লাগিয়ে দেন। 

ভুক্তভোগী দুই যুবক দাবি করেন, ওই মেয়ে পরিচিত ছিল। তাই বিয়েবাড়িতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এটা দেখে মেয়ের বড় ভাইসহ আরও কয়েকজন ধরে ইউপি সদস্য সায়েম গাজীর কাছে নিয়ে যায়। তারা আমাদের মারধর করে মাথার চুল কামিয়ে আলকাতরা লাগিয়ে দিয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে এখন পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।  

ভুক্তভোগী কালুর বাবা লিটন গাজী বলেন, ‘আমার ছেলে এমন কী অপরাধ করেছে? যার কারণে মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ওই মেয়ের বড় ভাই দাবি করেন, ‘তারা মোবাইলে বিভিন্ন সময় আমার বোনকে বিরক্ত করতো। বোন বিয়েবাড়িতে গেলে সেখানে বসে তারা দুজনে উত্ত্যক্ত করে। বিষয়টি বোন আমাকে জানালে তাদেরকে ধরে মেম্বারের কাছে নিয়ে যাই। পরে সালিশের মাধ্যমে সেলুন থেকে মেশিন দিয়ে তাদের ন্যাড়া করে সতর্ক করা হয়েছে। তবে আলকাতরা কে বা কারা লাগিয়েছে জানা নেই।’

এ বিষয়ে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সী বলেন, ‘ওই দুই যুবক বর পক্ষের যাত্রী ছিল। বিয়েবাড়িতে কোনও এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে তাদের ধরে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার আমাকে জানিয়েছে। বিয়েবাড়ির কিছু লোক জানিয়েছে, মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করেছে তারা। তবে যেই এ ঘটনা করে থাকুক এটা মোটেও ঠিক হয়নি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।’ 

মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য আবু সায়েম দাবি করেন, ‘এরকম কোনও সালিশ হয়নি। আমি কারও মাথা ন্যাড়া করিনি।’

গলাচিপা থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি, এটি ন্যক্কারজনক। থানায় মামলা করার জন্য আসার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরে শুনলাম তারা নাকি আদালতে মামলা করেছে।’

এই বিষয়ে জানতে পটুয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও পাওয়া যায়নি।