দুয়ারি জালে হুমকির মুখে জলজপ্রাণী

চায়না থেকে আমদানি করা অবৈধ দুয়ারি জালে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। ওই জালে ৭০ পদের জলজপ্রাণী ধ্বংস হচ্ছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এ থেকে মুক্তি পেতে দুয়ারি জাল আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন পরিবেশবাদীরা।

দুয়ারি জাল ব্যবহারকারী বরিশালের আগৈলঝাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই জালের ফাঁস খুব ছোট, জাল অনেক শক্ত। ছোট আকারের মাছ থেকে শুরু করে যেকোনও জলজপ্রাণী জালে আটকে যায়। এ কারণে ওই জালের প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডোবা-নালা, খাল ও নদীতে ওই জাল দিয়ে মাছ শিকারের ধুম পড়ে। মৎস্য কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাল ব্যবহার করা হয়। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলার একাধিক গ্রামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দুয়ারি জাল ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি এর ব্যবহার। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িতে বসেই জাল বিক্রি করছেন। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জাল কিনছেন মৌসুমি মাছ শিকারীরা।

দুয়ারি জালের কু-প্রভাব বিষয়ে বরিশালের সরকারী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে মাছের রেণুপোনা ধ্বংসের পাশাপাশি ৭০ প্রকার জলজপ্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পানিতে বসবাসকারী ছোট ছোট প্রাণীগুলোকে বড় প্রাণীরা খেয়ে বেঁচে থাকে। এখন ছোট প্রাণীগুলো যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে বড় প্রাণীগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে জনজীবনে।

তিনি আরও বলেন, জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ে মৎস্য আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ জাল আমদানি বন্ধ এবং দেশে উৎপাদনকারী কারখানাগুলো ধ্বংস করা হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলম জানান, বর্ষা মৌসুমে খাল, বিল, ডোবা-নালাসহ যেখানে পানি জমে সেখানেই দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়ে যায়। আর এ সুযোগ নেয় কিছু মৌসুমি মাছ শিকারি। তারা অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে জলজপ্রাণী ধ্বংস করে ফেলছে। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একাধিকবার অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। ওই সময় হাজার হাজার মিটার দুয়ারিসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কারণ, জাল পেলেও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জলজপ্রাণী রক্ষায় অবৈধ জালের ব্যবহারে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু আগৈলঝাড়া নয়, জেলার ৯ উপজেলার একই অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে যেখানে পানি জমছে সেখানেই দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার জলজ প্রাণী বাসা বাঁধছে। আর বড় হয়ে ওঠার আগেই দুয়ারি জালে আটকে যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজপ্রাণী।  

গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় ২০২১ জুলাই থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত ১৪টি অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগুরা স্টিল ব্রিজ ও দোনারকান্দি এলাকা থেকে পাঁচ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একইভাবে অবৈধ জাল বিক্রির অভিযোগে পেলে সেখানেই অভিযান চালানো হয়। এ জন্য মৎস্য শিকারিদের সচেতন করে তোলার পাশাপাশি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতি তিন মাস পরপর ১৪ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, দেশীয় প্রজাতির মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রতিটি উপজেলায় অভিযান চালানোর জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে কিনা তা তদারকিও করা হচ্ছে। বাজারগুলোতেও অভিযান চলছে। তবে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি। কেবল অভিযান চালিয়ে অবৈধ জালের ব্যবহার রোধ করা যাবে না। এ জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।