শের-ই বাংলা মেডিক্যালে দুদকের অভিযান, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ বিএমএর 

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক ও চিকিৎসকদের কাজে উপস্থিতির বিষয়ে অনিয়ম পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদক সদস্যরা আকস্মিকভাবে কলেজ ও হাসপাতালে পরিদর্শনে যান বলে নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল। দুদকের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে চিকিৎসকদের নিজ নিজ কক্ষে পাওয়া যায়নি বলে বলে জানান তিনি। এদিকে দুদকের পরিদর্শনের সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সদস্যরা।

দুদক সূত্র জানায়, দুদক টিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে গিয়ে তাকে পায়নি। পরে তারা সহকারী অধ্যাপক নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অমিতাভ সরকারের কক্ষে যান। তাকেও নির্ধারিত কক্ষে পাওয়া যায়নি। পরে দুদক কর্মকর্তারা কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে যান। দুদক টিম প্রবেশের খবর পেয়ে অধ্যক্ষসহ অনেক চিকিৎসকই কলেজের প্রশাসনিক ভবনে আসতে শুরু করেন। এমনকি সকাল সোয়া ১০টার দিকেও অধ্যক্ষের কক্ষে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে দেখা গেছে অনেক শিক্ষককে। 

এ অবস্থায় দুদক দল কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তবে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন তা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে।  

এ ঘটনার জেরে দুপুরে মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে কলেজ ও হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে দুদক কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ সভা করে বিএমএ বরিশাল জেলা শাখার সদস্যরা। সভা শেষে বিএমএর বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ডা. ইসতিয়াক আহম্মেদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এ সময় তারা দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার বিচার দাবি করেন। 

মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, দুজন চিকিৎসকের নামে অভিযোগ পেয়ে দুদক অভিযানে আসে। তারা আমার কাছে এসে হাজিরার রেজিস্ট্রার চায়। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তা দেওয়া যাবে না জানিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। দুদক মহাপরিচালককে অবগত না করে হাজিরা রেজিস্ট্রার চাইতে পারে না। তখন দুদক কর্মকর্তা রাজ কুমার সাহা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অধ্যক্ষ আরও অভিযোগ করেন, আমার কক্ষে ঢুকে দুদক কর্মকর্তারা যে আচরণ করেছেন তা তারা করতে পারেন না। আমি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে সব চিকিৎসককে জানানো হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুদকের বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল। তিনি বলেন, সেখানে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেনি। তদন্ত করে যা পাওয়া গেছে তার প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা জানান তিনি।

বিএমএর বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ডা. ইসতিয়াক আহম্মেদ বলেন, একটা অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ সভা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সদস্যরা। দুদক টিম কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা চান। তারা ডিজির অনুমতিতে নেননি। এ অবস্থায় তালিকা না দেওয়ায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা অশালীন ব্যবহার করেন। দুর্ব্যবহারের বিচার চেয়ে দুদক চেয়ারম্যানসহ সরকারের সব দফতরে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হবে।