অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু এবং তার স্ত্রী-ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে আজিজুল আলম বেন্টুকে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি হয়। মামলার বাদী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক আজিজুল আলম বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)। দুদকের মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিল মূলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমি পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের মোট ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অথচ সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেন। ফলে তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।
অপরদিকে, অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিণী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। তার টিআইএন নম্বর- ৫৮৫৬৫৯৪৭৫১৯৬। নাসিমা আলমের ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকা। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে।
ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। তার টিআইএন নম্বর-৫৯২৮১৫৩২০৬০৩। ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। অনুসন্ধানকালে তার আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।
দুদক আরও জানান, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় আজিজুল আলম বেন্টু ছাড়াও স্ত্রী ও ছেলেকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, মামলটি দায়েরের পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।