শাহজাহান খানের মৃত্যু, ছেলে বললেন বিচার চাই না, মামলা করবো না

পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান খানের মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত মামলা করবে না বলে জানিয়েছেন তার ছেলে শিপলু খান। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় পটুয়াখালীর বড় মসজিদ সংলগ্ন পুরাতন আদালত মাঠে শাহজাহান খানের দ্বিতীয় জানাজার আগে এসব কথা বলেন শিপলু। তিনি পটুয়াখালী জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

শিপলু খান বলেন, ‘কার কাছে বিচার চাইবো? যে দলের ক্যাডাররা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, সেই দলের কাছে বিচার চেয়ে কী লাভ হবে? আমার বাবা এই শহরের একজন সিনিয়র সিটিজেন, সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা তাকে নির্মমভাবে মারধর ও নির্যাতন করে মেরে ফেললো। আমরা এই সরকারের আমলে মামলা করে ন্যায়বিচার পাবো না। এজন্য আপাতত মামলা করবো না। এখানে যারা আছেন আমি আপনাদের কাছে বিচার দিলাম। আর কারও কাছে বিচার চাওয়ার নেই। আমি এই সরকারের কাছে বিচার চাই না। কারণ তারা বিচার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যারা এখানে আছেন আগে দেখেছেন পটুয়াখালীর মানুষ মুরুব্বিদের সম্মান করে। আগে রাজনীতিতে বিরোধী দলের সঙ্গে সহিংসতা ছিল, আবার ভালো আচরণও ছিল। এখন পটুয়াখালীর রাজনৈতিক পরিবেশ এতটাই নষ্ট হয়ে গেছে, একজন বৃদ্ধ মানুষকেও তারা আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করেনি। আমার বাবা বিএনপি করতেন এটাই ছিল তার অপরাধ। এই অপরাধের কারণে আমার বাবার ওপরে হামলা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। এতে আমার বাবার কিডনি ফেটে মৃত্যু হয়। এই হত্যার বিচার চাই না। আমার বাবা যদি কোনও ভুলত্রুটি করে থাকে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।'

আদালত মাঠে শাহজাহান খানের দ্বিতীয় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টিসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, সোমবার বাদ জোহর পল্টন বিএনপি অফিসের সামনে শাহজাহান খানের প্রথম জানাজা, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পটুয়াখালীর বড় মসজিদ সংলগ্ন মাঠে দ্বিতীয় জানাজা, বেলা সাড়ে ১১টায় দশমিনা উপজেলা খানকাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা, দুপুর পৌনে ১টায় উলানিয়া বন্দরে চতুর্থ জানাজা, বাদ জোহর গলাচিপা হাইস্কুল মাঠে পঞ্চম জানাজা, বাদ আছর গলাচিপা উপজেলার নিজ এলাকায় চিকনিকান্দী গ্রামে ষষ্ঠ জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দক্ষিণ সুতাবাড়িয়া গ্রামে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় শাহজাহান খানের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী এসে পৌঁছায়। এ সময় তাকে এক নজর দেখার জন্য পটুয়াখালী পৌর শহরের আদালত পাড়া নিজ বাসভবনে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে।

গত ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে যাওয়ার পথে ৪ নভেম্বর রাতে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের গাবুয়া বাজার এলাকায় শাহজাহান খানের মোটরসাইকেল বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। ঘটনার ২৩ দিন পর সোমবার ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শাহজাহান খান। হামলায় তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে রক্ত জমা হয়ে মলমূত্রত্যাগ বন্ধ হয়ে যায় তার।

শাহজাহান খান ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পদে ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।