১৬০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভ ৭ লাখ টাকা

বেশি লাভের আশায় আগেভাগেই তরমুজ তোলা শুরু করেছেন কৃষকরা। একইসঙ্গে ভালো দাম পেয়ে অনেক চাষি তরমুজ ক্ষেত বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে অনেকে লাভবান হচ্ছেন।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল মৌ গ্রামের কৃষক মিজান হাওলাদার বলেন, ‘১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছি। ১২ লাখ টাকায় ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছি। এতে ৬-৭ লাখ টাকা লাভ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরমুজের দাম পেয়ে আমি খুশি। কারণ আবহাওয়ার অবস্থা কখন কী হয় বলা যায় না। সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে শিলাবৃষ্টি। এ কারণে আগেভাগে তরমুজ বিক্রি করেছি। কিছু ছোট ছোট তরমুজ রেখে দিয়েছি। একমাস পর বিক্রি করবো।’

একই এলাকার কৃষক বাহাদুর বলেন, ‘৩০০ টাকা শতাংশ হিসাবে ১৬০ শতাংশ জমি লিজ নিয়েছি এক ব্যক্তির কাছ থেকে। ওই জমিতে প্রতি বছর তরমুজ চাষ করে আসছি। এ বছর ওই জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকার বেশি। বিক্রি শেষে ৪-৫ লাখ টাকা লাভ হবে। এখন বড় তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে, ছোট তরমুজ ক্ষেতেই থাকছে। ছোট তরমুজ বড় হতে আরও ৩০ দিন সময় লাগবে। সেখান থেকেও যা পাওয়া যাবে তা লাভের অংশ হবে।’

নগরীর পোর্ট রোডের আড়তদার মাহবুব মিয়া জানান, ভোলা ও পটুয়াখালীতে তরমুজের ক্ষেত কিনেছেন। সেখান থেকে পাঁচটি ট্রলারে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৫০ হাজার তরমুজ এসেছে। একটি তরমুজের দাম কৃষক পাচ্ছেন সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত। এরপর শ্রমিক খরচ ও ট্রলার ভাড়া যুক্ত হয়ে আড়তে পৌঁছাতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

tormuj2

তিনি আরও জানান, ট্রলার ও ট্রাকের ভাড়া গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। ফলে গত বছর যে ট্রলারের খরচ ছিল দুই হাজার টাকা তা এ বছর ৫-৬ হাজার টাকা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একটি ১০০ টাকার তরমুজে ৩০ টাকা খরচ যুক্ত হচ্ছে ঘাটে এসেই। এরপর পাইকারি বাজারের আড়তদার যখন চকরিয়ার বাজারে তুলছেন তখন দেড় কেজি বা দুই কেজি ওজনের তরমুজের দাম সর্বনিম্ন ৭০ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পোর্ট রোডের আড়তদার ওমর আলী জানান, প্রতিদিন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০-৬০টি ট্রলারযোগে তরমুজ আসছে পোর্টরোড খালে। সেখান থেকে ট্রাক ভরে তা চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে।

ট্রাকচালক আব্দুল মান্নান জানান, তেলের দাম থেকে শুরু করে ট্রাকের জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। সেই হিসেবে টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে কিন্তু লাভ থাকছে না। প্রতিটি ট্রাকে পাঁচ হাজারের অধিক তরমুজ উত্তোলন করা হচ্ছে। সে হিসেবে আটটি ট্রাকে নেওয়া হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি তরমুজ।

বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান বলেন, ‘গত বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। পটুয়াখালীতে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। তবে বাজারে আসতে আরও দেড় মাস সময় লাগবে। চলতি বছর বিভাগের প্রায় ২০ হাজার কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা শিউলি আকতার বলনে, ‘চলতি বছর পটুয়াখালীর ২৮ হাজার, ভোলায় ১৮ হাজার ও বরগুনায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। বরিশাল জেলাতেই শুধু তরমুজ চাষ কম। এখানে এক হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এ বছর ৪৮ হাজার মেট্রিক টন তরমুজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

খামারবাড়ি বরিশালের তথ্যমতে, গত মৌসুমে (২০২১-২২) বিভাগের ছয় জেলায় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এবার জেলার তরমুজের আবাদ আরও বেড়েছে।