সেনাসদস্য অপহরণ মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৩ নেতা কারাগারে

বরিশালের হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর ১০০ একর এলাকায় বালুমহাল ইজারা নিয়ে সেনা সদস্যকে অপহরণের অভিযোগে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও মহিলাদলের নামধারী ১২ ও অজ্ঞাত আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করে থানায় দিয়েছে সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে মতিন কাজী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। তিনি চাঁদপুরের মহনপুর এলাকার কাজী আবুল হোসেনের ছেলে। সেনা সদস্য জাফর চাঁদপুরের মহানপুর এলাকার শওকতের ছেলে। তিনি রাজশাহী সেনা ক্যাম্পে কর্মরত।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাদী মতিন কাজী নগরীর গনপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আবুল বাছেদকে লিজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নগরীতে ‍আসেন। দরপত্র ফেলতে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয় এ জন্য তার সঙ্গে নিয়ে আসা হয় ওই সেনা সদস্যকেও।

আটকরা হলেন- হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির হোসেন দেওয়ান, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নূর হোসেন সুজন ও হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য ইমরান খন্দকার। সবার বাড়ি হিজলার হরিনাথপুর গ্রামে।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- বরিশাল জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহফুজুল আলম মিঠু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব নিজামুর রহমান নিজাম, হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির হোসেন দেওয়ান, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাকসুদুর রহমান মাসুদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নূর হোসেন সুজন, ইমরান খন্দকার, জাহিদ ও রুবেল। সর্বশেষ তিন জন্য ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, সোমবার (২৫ মার্চ) বালুমহালের ইজারার দরপত্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেন। এ সময় বিবাদীরা কেন দরপত্র জমা দিয়েছে তা নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বের হলে বিবাদীরা তার ভাতিজা জাফরকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানান।

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারেন, বরিশাল লঞ্চঘাট সংলগ্ন রিচমার্ট আবাসিক হোটেলের ৩১০নং রুমে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ওই সময় তার ভাতিজা জাফর নিজেকে সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পরিচয় দিলে এবং আইডি কার্ড দেখালে বিবাদীগণ ভেঙে ফেলে এবং নিজেদেরকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে ভুয়া পরিচয় দেন। এরপর তার ভাতিজার হাত ও পা বেঁধে মারধর করেন। এ সময় ভাতিজার সঙ্গে থাকা এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন, এক লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের আইফোন এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা তারা নিয়ে যান।

বিবাদীরা হুমকি দেন দরপত্র তুলে না নিলে তাকে খুন করে ফেলবে। হোটেল থেকে বিবাদীরা চলে যাওয়ার পর জাফর সেখান থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান। ওই রাতে জাফরকে টেকেরহাট থেকে নিয়ে আসা হয়। ‍এরপর হোটেলের বিষয়গুলো বাদীকে জানান।

একই সময় নৌবন্দর এলাকা থেকে ওই তিন জনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার দুপুরে আটকদের কোতোয়ালি মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। সেখান থেকে আদালতে নেওয়ার পর বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

একাধিক বিবাদী অভিযোগ করেন, জাফরকে অপহরণ করা হলে কীভাবে রুম থেকে বের হলো। বাদী যা অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাদী মূলত ওই সেনাসদস্যকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাছেদের পক্ষে দরপত্র জমা দেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি কেন একজন নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীর জন্য দরপত্র জমা দেবেন। আর ওই সেনাসদস্যকে তারা নিয়ে এসেছিল দরপত্র জমা দিতেই। ওই দরপত্র হজম করতে অপহরণ নাটক সাজানো হয়েছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাদী কাজী মতিন বলেন, চাঁদপুর থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য বরিশালে আসেন। এ জন্য তিনি তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা জাফরকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে বাছেদও ছিল। কারও পক্ষে না। নিজের জন্যই দরপত্র জমা দেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বাদীর করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ‍আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠান। অপর ‍আসামিদেরও ‍গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

গতকাল সোমবার ছিল বরিশালের হিজলা মেঘনা নদীর ১০০ একর এলাকায় বালুমহাল ইজারার দরপত্র জমাদানের শেষ দিন। এর আগে কাজ গোছানোর জন্য বিবাদীরা ৩০ দরপত্রদাতাকে একটি হোটেলে নিয়ে বসিয়ে রাখেন। সুযোগ বুঝে বাদী তার দরপত্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বক্সে ফেলে দেন।

মোট তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। যেখানে সরকার থেকে ইজারার সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ হয় ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতিযোগিতায় ওই ইজারা দেওয়া হয় ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। ইজারা পান বাছেদ।