এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় চলমান প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচির মধ্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। রাত সাড়ে ১১টায় আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনের কোনও পর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। অথচ শেষ মুহূর্তে ফেসবুক লাইভে আসছেন। এখন আর কোনও সুযোগ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিতে হবে। না হয় কঠোর আন্দোলন হবে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রশাসনিক অদক্ষতা, কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমেছে তাদের।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, মঙ্গলবার বেলা ২টার মধ্যে দাবি মানা না হলে দক্ষিণবঙ্গকে বাংলাদেশের বাকি অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। আমরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না, চাই শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক সমাধান।’
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সিরাজিস সাদিক, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌসী জামান, সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাদিকুর রহমান ও অসিম কুমার নন্দী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ টি এম রফিকুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসেন (ফয়সাল), গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিউল আলম প্রমুখ।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও ‘পাতানো’ সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে তৎকালীন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ মে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। পর দিন ৪ মে উপাচার্য শুচিতা শরমিন সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন তার সিন্ডিকেট সদস্য পদে পুনর্বহালের বিয়ষটি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় এ বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য। এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। এরপর ওই দিন দুপুরে আন্দালনরত শিক্ষার্থীদের ওই অংশ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবির আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তারা প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেছেন, আন্দোলনটি কতিপয় ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের তিনি বারবার অনুরোধ করেছেন যেন তারা ভুল পথে না যান এবং আন্দোলন থেকে ফিরে আসেন।