হাওরের ক্ষতি দেখিয়ে চালের দামে কারসাজি কুমিল্লায়!

কুমিল্লায় চালের আড়ত (ছবি: কুমিল্লা প্রতিনিধি)হাওরের ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ফলে বাজারগুলোতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষরা। ভোক্তা, খুচরা বিক্রেতা এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর কারসাজিতেই চালের বাজারে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ বন্যার কারণে ধানের ওপর প্রভাব পড়লে বাজারে তার প্রভাব আরও দেরিতে পড়ার কথা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

তবে কুমিল্লার বিভিন্ন বাজারের আড়ৎদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছেন, হাওরে বন্যা, দেশ জুড়ে শীলাবৃষ্টি ও ভারী বর্ষণের কারণেই চালের বাজারে দাম বেড়েছে। বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করছেন তারা।  

কুমিল্লার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, মোটা ও চিকনসহ সব জাতের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। নিম্ন আয় ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।  বাজারে চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে অস্থিরতা প্রকাশ করে কুমিল্লা সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের দিনমজুর মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সংসারে ৬ জন মানুষ। দুই ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। দৈনিক মজুরের কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনে অবশিষ্ট তেমন কিছু থাকে না। এ অবস্থায় সংসারের অন্যান্য খরচ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু খেয়ে বাঁচতে হবে। না খেয়ে তো থাকতে পারবো না।’ 

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিলার, পাইকারি ও আড়ৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই চালের দাম বেড়েছে। একটি সিন্ডিকেট চাল মজুদ করছে। পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে তারা। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। মিলার, পাইকাররা অতিমাত্রায় মুনাফার চেষ্টা করছেন।কুমিল্লায় চালের আড়ত (ছবি: কুমিল্লা প্রতিনিধি)

কুমিল্লা নগরীর চকবাজার, রাজগঞ্জসহ কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে স্বর্ণা ও মিনিকেট পঞ্চাশ কেজি বস্তায় বেড়েছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা, বিরি-২৮ ৪শ টাকা, এলজি পারিজাতসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে আড়াই শ থেকে ৩শ টাকা। আর মোটা চালের কেজিতে ১০-১১ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করছে ব্যবসায়ীরা।

দিলীপ দা ও জয়দেব চন্দ্র সাহা চালের আড়ৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল দুই সপ্তাহের মধ্যে চাল প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তারা জানান, গত কয়েক দিনে অস্বাভাবিকভাবে সব চালের দামই বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। গুটি স্বর্ণাখ্যাত মোটা চাল কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত কয়েক বছরে এই চালের দাম এতটা বেড়েছিল বলে জানা নেই।

কুমিল্লা সদরদক্ষিণ উপজেলার লালমাই এলাকার কৃষক মনির হোসেন সুমন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ৫০ একর জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছর একই জমিতে যে পরিমাণ ধান পেয়েছি, এবার প্রায় ৪০শতাংশ ধানের আবাধ নষ্ট হয়েছে। এবছর ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতিবৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি এবং প্রচণ্ড বাতাসে ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল পাওয়া যায়নি।’

কুমিল্লার চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিলার (প্রিথিলা অটো রাইস মিলস) ম্যানেজার সমন সূত্রদর বলেন, ‘প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে যে হারে ধান সংগ্রহ করেছি এবছর তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। আমারা সিলেট, লালমনিরহাট, পাবনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, দিনাজপুর এবং কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে থাকি। এবছর উত্তরাঞ্চল এবং সিলেট সুনামগঞ্জের হাওর এবং শীলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়েছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে চালের দাম বৃদ্ধিতে। হাওর-বাওরের কথা বলে ওই সব কারসাজি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। হাওরের ধান চাল হয়ে বাজারে আসতে কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগে। কিন্তু সেখানে দেখেছি হাওরের ধান বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পরের দিনেই বাজারে চালের দর বাড়তে শুরু করেছে।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বাণিজ্য ও ব্যবসা বিভাগের এনডিসি আফিয়া খান বলেন, ‘হঠাৎ করে কেন কুমিল্লার বাজারগুলো চালের দর অস্থির সেটা খতিয়ে দেখবো। সরকারের দেওয়া মূল্য থেকে কত টাকা বেশি বিক্রয় করছে ব্যবসায়ীরা সেটা যাচাই বাছাই করে সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করা হবে।’

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 'বিএনপির গাড়িবহরে হামলাকারীরা আ. লীগের অঙ্গ সংগঠনের'