ভারতীয় শিক্ষার্থী খুন: তিনটি প্রশ্ন ঘিরেই এগোচ্ছে তদন্ত

আতিফ শেখচট্টগ্রামে ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ হত্যার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কয়েকটি প্রশ্নের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত।  এ ঘটনায় এখনও মামলা না হলেও তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলেই হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারবেন তারা।

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব,  নাকি আতিফের  বান্ধবী তম্বরাম জয়ৎসনা দেবিকে নিয়ে বিরোধ, নাকি অন্য কোনও কারণ  রয়েছে তা  খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া  ঘটনার সময় আতিফের আরেক বন্ধু নিরাজের ভূমিকাও ছিল সন্দেহজনক বলে দাবি করছে পুলিশ।



হত্যার পর নিরাজ ও জয়ৎসনা পুলিশের কাছে দাবি করেন, ঘটনার সময় তারা  রুমের মধ্য থেকে কোনও ধরনের ধস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পাননি।  কিন্তু আলামত বিশ্লেষণের পর তাদের এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছে না পুলিশ। তাই এ ঘটনার পর দু’জনের পাসপোর্টই পুলিশ নিজেদের জিম্মায় রেখেছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিনগত রাতে নগরীর আকবর শাহ থানাধীন আব্দুল হামিদ সড়কের পাশে লেকভিউ সোসাইটির একটি আবাসিক ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ভারতীয় নাগরিক আতিফ শেখ।  তাকে  হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই কক্ষে থাকা তার আরেক বন্ধু উইনসন সিং।ঘটনার আগে দু’জনই ওই কক্ষে মদ্যপান করেছেন বলে জানিয়েছেন ফ্ল্যাটে থাকা আরেক বন্ধু নিরাজ।

তদন্তকালে পুলিশ কর্মকর্তা জানতে পারেন উইনসন কোমরের বেল্ট দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।  তিনি ফাঁস দিতে  ওই কক্ষে থাকা টেবিল ব্যবহার করতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের।

হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আকবর শাহ থানার উপ-পরিদর্শক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার পর কক্ষে গিয়ে আমরা একটি টেবিল দেখেছি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই টেবিল ব্যবহার করে উইনসন ফাঁস দিয়েছেন। কারণ ওই কক্ষে থাকা বিছানার ওপর থেকে কোনোভাবেই ফাঁস দেওয়া সম্ভব না।’

এ নিয়ে পুলিশের প্রশ্ন, উইনসন টেবিলটি ব্যবহার করার সময় ফ্ল্যাটে থাকা অন্যরা কেন আওয়াজ পাননি? তারও আগে যখন আতিফ শেখকে ছুরিকাঘাত করা হচ্ছে, তখন কি সে চিৎকার করেনি? ধস্তাধস্তি যদি করেই থাকে তবে ফ্ল্যাটে থাকা নিরাজ ও জয়ৎসনা কেন কিছুই শুনতে পাননি?ইউএসটিসি

অন্যদিকে, আতিফ শেখের স্ত্রী পরিচয়ে জয়ৎসনা দীর্ঘদিন ধরে ওই ফ্ল্যাটে আতিফের কক্ষে থাকলেও তিনি ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের গঠন করা তদন্ত কমিটির কাছে জানিয়েছেন, আতিফ শেখের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। তারা ভালো বন্ধু ছিলেন বলে একই কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ডাক্তার নুরুল আবছার জানিয়েছেন, ঘটনার পর তারা ওই ফ্ল্যাটে থাকা জয়ৎসনা ও নিরাজের জবানবন্দি নিয়েছেন। ওই সময় জয়ৎসনা স্বীকার করেছে, আতিফের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। তারা এক সঙ্গে একই কক্ষে থাকতেন।

এদিকে, খুনের ঘটনায় ইতোমধ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  ঘটনার পর আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে সিআইডি।

আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও  মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আমরা সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছি। ওই ফ্ল্যাটে থাকা নিরাজ ও জয়ৎসনার পাসপোর্ট আমাদের হেফাজতে রয়েছে।’

অন্যদিকে, সোমবার নিহত আতিফের মা-বাবা চট্টগ্রামে আসার কথা থাকলেও তারা এদিন আসেননি। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ নগরীর দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে রয়েছে।

ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক বদরুল আমিন ভূঁইয়া জানান, সোমবার আতিফের মা-বাবা চট্টগ্রাম আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা এখনও আসেননি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভারতের গোহাটি থেকে রওনা দিয়ে এখন তারা আগরতলায় অবস্থান করছেন।

/এমও/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এক ভারতীয় শিক্ষার্থীর হাতে আরেক ভারতীয় খুন