চট্টগ্রামে সমাবেশে কর্মীদের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিলেন বিএনপির নেতারা

চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ
নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খল আচরণ, হুড়োহুড়ি ও নেতাদের নামে দেওয়া স্লোগান ঠেকাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে যোগ দেওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,  আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই বিশৃঙ্খল আচরণের মুখে পড়েছেন। এক পর্যায়ে বক্তব্য শেষ না করেই চলে যাওয়ার হুমকি দিতে বাধ্য হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার নুর আহম্মদ সড়কে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশের পুরোটা সময়জুড়ে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খল আচরণ করেছেন। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার চেয়ে উচ্ছৃঙ্খল এই নেতাকর্মীদের শান্ত করতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে অতিথিদের। স্লোগান বন্ধ করতে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা শান্ত হননি। নিজ নেতার নামে করা ব্যানার, পোস্টার নামানোর জন্য স্টেজ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেননি।চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ

বিকাল সাড়ে ৫টায় বক্তব্য দিতে মঞ্চে দাঁড়ান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্য শুরুর আগেই তার পাশে দাঁড়ানো নিয়ে নেতাকর্মীরা শুরু করেন হুড়োহুড়ি। তাদের এমন আচরণে এসময় বক্তব্য না দিয়ে ডায়াস থেকে চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপির এই নেতা।

ক্ষুব্ধ হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যদি আমাকে কিছু বলতে দিতে চাও, তবে দয়া করে চুপ কর। না হয়, আমি নেমে চলে যাই। এভাবে তো বক্তব্য রাখা যায় না।’ বারবার চুপ করার জন্য অনুরোধ করার পরও শান্ত না হলে একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘কী শুরু করেছো তোমরা এখানে?’ পরে স্টেজে থাকা অন্য নেতাদের অনুরোধে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

শুরুতে বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিশৃঙ্খল অবস্থায় কখনও যুদ্ধ জয় করা যায় না। কখনও কোনও বিজয় অর্জন করা যায় না। শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে, ত্যাগের মধ্য দিয়ে, নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য রেখেই যুদ্ধে জয় করা সম্ভব, বিজয় অর্জন সম্ভব।’

শুধু মির্জা ফখরুল নয়, তার আগে বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও নেতাকর্মীদের এ ধরনের আচরণের মুখে পড়েন। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে বক্তব্য দিতে আসেন তিনি। তার বক্তব্যের শুরুতেও নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ

মির্জা আব্বাসের আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখা খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অবস্থার শিকার হয়েছেন। তার বক্তব্যের সময়ও নেতাকর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করলে মঞ্চে থাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বেশ কয়েক দফায় নেতাকর্মীদের শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে তাতেও কাজ হয়নি।

এর আগে সমাবেশে বক্তব্য দিতে উঠেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বক্তব্য দিতে শুরু করলে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। বারবার নিষেধ করার পরও তারা শান্ত হননি। তাদের শান্ত করতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন স্টেজে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার শান্ত হওয়ার নির্দেশনা দেন।

নেতাকর্মীদের এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে আপনাদের স্লোগান শুনতে আসিনি। আপনাদের কিছু কথা শোনার জন্য আর আমাদের কিছু কথা আপনাদের বলার জন্য এ সমাবেশে এসেছি। দয়া করে কিছু কথা বলার সুযোগ দিন।’

তারপরও তারা চুপ না করলে এরমধ্যেই তিনি বক্তব্য শুরু করেন। ১১ মিনিটের বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির এই নেতাকে দুই থেকে তিনবার নেতাকর্মীদের শান্ত হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিতে হয়েছে।

তার আগে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে বক্তব্য দেন সাবেক চিফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক। বক্তব্য দিতে গিয়ে শুরুতে দুই হাত জোড় করে নেতাকর্মীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। তাতে তার অনুরোধ রাখেননি নেতাকর্মীরা।

জয়নাল আবেদীন ফারুকের পর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান। তারপরে বক্তব্য দেন বরকত উল্লাহ বুলু। এসময় বারবার বসে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়ার পরও নেতাকর্মীরা না বসায় একপর্যায়ে বরকত উল্লা বুলুর বক্তব্যের সময় মঞ্চ থেকে নেমে স্টেজের সামনে গিয়ে মাটিতে বসে পড়েন জয়নাল আবেদিন ফারুক ও মোহাম্মদ শাজাহান। এসময় তাদের দেখে স্টেজের সামনে থাকা শতাধিক নেতাকর্মী বসলেও অন্যরা আগের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন।