সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে ফেনীর শুভপুর ব্রিজ

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে ফেনীর শুভপুর ব্রিজফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাটের মাঝামাঝি ফেনী নদীর উপর অবস্থিত শুভপুর ব্রিজ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী এই ব্রিজটি। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই প্রতিদিন ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে শত শত ভারী যানবহন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,  ১৯৫১ সালে স্থাপিত হওয়া ১২শ’ ফুট দীর্ঘ সরু ব্রীজটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ইস্পাতের পাতের ওপর নির্মিত এ অঞ্চলের সর্বপ্রথম স্থাপিত এই ব্রিজটিতে স্থানে স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঢালাইয়ের কার্পেটিংয়ের রড নিচের দিকে ধসে যাওয়া ও কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে চালকরা আতঙ্কে গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি খালি করে ব্রিজ পার করছেন। এতে চোর-ডাকাতের কবলে পড়ে অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।


ব্রিজের মাঝে ভাঙাবর্তমানে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় শত শত হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করছে। পার্বত্য জেলাগুলো থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্রিজটি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু ব্রিজটির জীর্ণদশার কারণে অনেক সময় দূরপাল্লার ভারী যানবাহন ঝুঁকির কারণে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প সড়ক হয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়। ভাঙন ও ফাটলের কারণে নাজুক অবস্থার মধ্যে ব্রিজটি এখন মরণফাঁদ। স্থায়ী মেরামত না হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা।



এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুভপুর ব্রিজ মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি বহন করছে। ১৯৭১ সালে এ ব্রিজের উপর পাকহানাদার বাহিনী অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। কিন্তু শঙ্কার বিষয়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ধ্বংসের মুখে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নীরব সাক্ষী ব্রিজটি।

ব্রিজের মাঝে ফাটলছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী বাংলাট্রিবিউনকে জানান, ব্রিজের উপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয় । ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়লে চরম ভোগান্তির শিকার হবে ফেনী, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকার লাখ লাখ মানুষ। এ ব্রিজ সংস্কার করে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের পাশাপাশি যান চলাচলে নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানান তিনি ।

ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলাট্রিবিউনকে বলেন , পুরাতন ব্রিজটির পাশে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ডিজাইন তৈরি ও হয়েছে। সয়েল টেস্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ হওয়ার পর নতুন ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হবে । একই সঙ্গে পুরাতন ব্রিজটি সংস্কার করে  ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে রক্ষা করার চেষ্টা থাকবে।