ইন্সপেক্টর হেলালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, দাবি স্ত্রীর

ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া

২০০৪ সালে চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ইয়াছমিন জুয়েল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার পর তৎকালীন সরকার তাকে হয়রানিমূলক বদলিসহ মানসিকভাবে নির্যাতন করেছিল। ওই সময় তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি সরকারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

হেলাল উদ্দিন গত রবিবার (১৭ জুন) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর রামপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি তৎকালীন চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের বন্দর থানার সার্জেন্ট এবং বর্তমানে বন্দর থানায় পুলিশের পেট্রোল ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী ইয়াছমিন জুয়েল আরও অভিযোগ করেন, ‘দুর্ঘটনার পর ফেনী সদর হাসপাতালে আমার স্বামীর চিকিৎসায় অবহেলা করেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে জেনেও চিকিৎসক আমাদের রক্তের কথা বলেনি। এছাড়া যে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আমার স্বামীকে ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, সেটিতে অক্সিজেন, এসি এবং ইমার্জেন্সি সাইরেন পর্যন্ত ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও দ্রুত সেবা পাইনি। সেখানকার কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের কাছে মুমূর্ষু রোগীর চেয়ে ৫ টাকার টিকিট অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেখা গেছে। সেই দিনটি আমাকে এখনও কাঁদায়।’
ইয়াছমিন জুয়েল বলেন, ‘আমি পুলিশের আইজি স্যারের কাছে আমার স্বামীর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত দাবি করেছি। তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু তদন্তের। কোন শত্রু আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, সেটা খুঁজে বের করার জন্য জানিয়েছি। আমার স্বামী কোনও অপরাধ করেনি। তিনি অবৈধ ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়ে দেশের উপকার করেছে, ক্ষতি নয়। অপরাধ না করেও আমার স্বামী আড়াই বছর জেল খেটেছেন। পরবর্তীতে ফের চাকরিতে যোগ দিলেও এক মাসে চারবার হয়রানিমূলক বদলিসহ নানাভাবে মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় আমার স্বামী ছুটি পেয়ে বাড়িতে আসেন। সবার সঙ্গে ঈদ করে পরদিন রবিবার চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। তাকে কোনও শত্রু পেছন থেকে ধাওয়া করেছিল। না হয় পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। আমার স্বামী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।’

স্থানীয় কেরণখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, হেলাল শান্ত স্বভাবের ছিলেন। এ দুর্ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনও বিষয় আছে কিনা তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছি।

গত ১৭ জুন রবিবার দুপুর ২টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী জেলার রামপুর এলাকায় পৌঁছানোর পর তার গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে ছিটকে গিয়ে আরও একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ওই প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। পরে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হেলাল উদ্দিন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়া মাস্টারের ছেলে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার ঘাটে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের সময় ঘটনাস্থলে প্রথম উপস্থিত হন তৎকালীন সার্জেন্ট ও কয়লার ডিপো ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন ভূঁইয়া। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান বাদী হয়ে চোরাচালান ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় আদালত সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অস্ত্র আইনের মামলায় তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

আরও পড়ুন: 

১০ ট্রাক অস্ত্র আটককারী ইন্সপেক্টর হেলাল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

কুমিল্লায় দাফন করা হয়েছে ইন্সপেক্টর হেলালকে