খাগড়াছড়িতে ১০ কারণে এইচএসসির ফল বিপর্যয়





এইচএসসি পরীক্ষা (ফাইল ছবি)খাগড়াছড়ি জেলায় এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। পুরো জেলায় ১৩টি কলেজে পাশের হার গড়ে ৩৬.৬৭ শতাংশ । চলতি বছর খাগড়াছড়ি জেলার ১৩টি কলেজে ৭ হাজার দুইশ ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ছয়শ ৬১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার পাঁচশ ৯৫ জন।মোটা দাগে ১০টি করণে খাগড়াছড়িতে এ ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন কলেজের শিক্ষকরা।

জেলায় সবচেয়ে ভালো করেছে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বিভাগ মিলে ৯২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ জন উত্তীর্ণ ছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একজন গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাছাড়া খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ এবং তবলছড়ি গ্রীনহিল কলেজ থেকে একজন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সবচেয়ে খারাপ করেছে পানছড়ি ডিগ্রী কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানের তিন বিভাগের সাতশ ২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে মাত্র একশ ৮ জন। পাসের হার ১৪.৯০ শতাংশ।
তবে প্রথমবারের মতো পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জেলায় তাক লাগিয়েছে গুইমারা কলেজ। এই কলেজ থেকে তিন বিভাগের একশ ৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮২ জন পাশ করেছে। পাসের হার ৭৭.৩৬ শতাংশ। এছাড়া খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের মোট পরীক্ষার্থীর ৫৪.১২ শতাংশ, চেঙ্গী সারিবালা স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে পাসের হার ৫৩.৮৫ শতাংশ এবং রামগড় সরকারি কলেজে ৪৭.৮০ শতাংশ পাশের হার নিয়ে জেলায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে পাসের হার ৪৭.৪৮ শতাংশ,মাটিরাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে পাসের হার ৩৬.৮৬ শতাংশ, তবলছড়ি গ্রীনহিল কলেজে পাসের হার ২২.৩৬ শতাংশ, মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী কলেজে পাসের হার ২৪.৯৭ শতাংশ, মহালছড়ি কলেজে পাসের হার ২৭.৫০ শতাংশ, জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী ছিল দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজে। কিন্তু ১ হাজার তিনশ ৮৭ জন পরীক্ষার্থীর বিপরীতে এই কলেজ থেকে পাশ করেছে মাত্র চরশ ৯৭ জন। পাসের হার ৩৫.৮৩ শতাংশ।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহ আহমেদ নবী, খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শাহ আল আলমগীর, দিঘীনালা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মন্টু বিকাশ চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মিজানুর রহমান, পানছড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা, সাবেক খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. সুধীন কুমার চাকমাসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলাপকরে জানা যায়, নানা কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। তবে প্রায় সকলে একমত কম-বেশি ১০টি কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।
ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য তারা যে ১০টি কারণ উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে– প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকে দুর্বল বেসিক নিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়া, কলেজে ইংরেজি, পদার্থ, আইসিটি বিষয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকসহ শিক্ষক সংকট, প্রশ্নপত্র তৈরিতে সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগের অভাব, ভালো মানের শিক্ষার্থীরা জেলার বাইরের নামীদামী কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া, সৃজনশীল পদ্ধতিতে ছাত্র-শিক্ষকদের অনাভ্যস্ততা, দুর্গমতার কারণে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে কম উপস্থিতি, শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া, পুরো বছর জুড়েই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পরীক্ষা ও কর্মসূচির জন্য পাঠদান ব্যহত হওয়া ও শিক্ষক-অভিভাবকের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা ।
ফলাফল বিপর্যয় থেকে উত্তরণেও নানা পরামর্শ দিয়েছেন এসব অভিজ্ঞ শিক্ষকরা। তারা মনে করেন, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ শিক্ষকসহ সকল শূন্যপদ পূরণ করা, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেসিক শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণা নিশ্চিত করা, পর্যায়ক্রমে মানোন্নয়ন করা, আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা, যুগোপযগী শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী প্রশ্নপত্র তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের ক্লাশমুখী করা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হওয়া, বছরব্যাপী বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করলে পরীক্ষায় বিপর্যয় ঠেকানো যাবে।