সন্তানদের বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিলেন মা

আগুনে মা ও ভাই-বোন হারানো শিশু নার্গিস‘আগুন লাগার পর মা চিৎকার শুরু করেন। তার ডাকাডাকিতে আমি আর বড় আপু ঘুম থেকে জেগে উঠি। তখনও আমার দুই ছোট ভাই-বোন ঘুমে ছিল। মা আমাদের রেখে তাদের বের করে আনতে আবার ঘরে যায়। মায়ের পেছনে পেছনে বড় আপুও ঘরে যায়। কিন্তু তারা কেউ আর ফিরে আসেনি। আগুনে পুড়ে তারা সবাই মারা গেছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই মা ও ভাই-বোনের মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনা দেন ১০ বছর বয়সী শিশু নারগিস।
রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ের ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন বস্তিতে আগুন লেগে মারা যান আটজন। এরমধ্যে নারগিস তার মাসহ তিন ভাই-বোনকে হারান।
নারগিস বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘রবিবার রাতে খাবার খেয়ে আমরা ঘুমিয়েছিলাম। মাঝরাতে চিৎকার শুনে জেগে উঠি। প্রথমে বাবা এসে মা, বড় আপু এবং আমাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে মা আর বড় আপু মিলে ঘুমিয়ে থাকা ছোট বোন ও ভাইকে আনতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়।’
এদিকে রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাকরুদ্ধ নারগিসকে নিয়ে বসে আছেন তার মামা মোহাম্মদ আকবর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি, ‘আগুন লাগার পর দুই মেয়েকে নিয়ে আমার বোন বের হয়। তাদের রেখে ঘুমে থাকা অপর দুইজনকে আনতে গেলে সে দগ্ধ হয়ে মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার পর বিদ্যুতের তার লিকেজ হয়ে ঘরের টিনে পড়ে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। ঘুমে থাকা ছোট মেয়ে এবং ছেলেকে আনতে গেলে সে বিদ্যুতায়িত হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বড় ভাগনি আসমাও পুড়ে মারা যান।’
02বস্তির বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে বস্তি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
রুমা আক্তার নামে ওই বস্তির এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, আগুন লাগার পর রহিমা চিৎকার করে সবাইকে ঘর থেকে বের করেন। এসময় তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, আগুন লাগার পর তিনজন লোককে মুখোশ পড়া অবস্থায় পালিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। তিনি তাদেরকে চিনেছেন, সকালে বলবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনতো আর তিনি নেই। অন্যদের বাঁচানোর পর নিজ ছেলে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই পুড়ে মারা গেছেন।’
একই অভিযোগ করেছেন আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক মাস আগে বস্তি খালি করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যারা বস্তি নিয়ন্ত্রণ করতেন তাদের কারণে আমরা যেতে পারিনি।’