মিয়ানমারের রাখাইনের মৃত্যুকূপ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যখন দিশেহারা, তখন টেকনাফে অনেকের মতো যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকও (৩২) তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন। তার বাবা নিজস্ব ১৪ একর জমিতে প্রায় ৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আর সেই ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-ব্লকে খুন হলেন রোহিঙ্গাদের হাতে।
ওমর ফারুকের খুনের প্রসঙ্গে পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ শহীন বলেন, ‘গত বছরে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ করার ছবি ওমর ফারুকের এখনও রয়েছে। আজ তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে রোহিঙ্গাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, যিনি মানবতার টানে রোহিঙ্গা জনস্রোতের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন, আজ সেই রোহিঙ্গারাই তাকে হত্যা করেছে। তারা ফারুককে নয়, মানবতাকে হত্যা করেছে। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে স্থানীয়রা ভুল করেছে। এখন স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের মাঝে নিরুপায় হয়ে পড়েছে।’
ফারুকের বাবা আবদুল মোনাফ কোম্পানি বলেন, ‘আমার ছেলে রোহিঙ্গাদের সবসময় উপকার করে আসছিল। তারাই আজ তাকে হত্যা করেছে। হয়তো রাজনৈতিকভাবে কিছু স্থানীয় লোক রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। মানবিক চিন্তা করে নিজস্ব ১৪ একর জমিতে প্রায় ৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, এরপরও রোহিঙ্গারা আমার ছেলেকে হত্যা করলো, আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মোহাম্মদ সেলিম ও নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ওমর ফারুক কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তার বাবা টেকনাফের জাদিমুরার আবদুল মোনাফ কোম্পানি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী নুর আলম বলেন, ‘ওমর ফারুক খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের উপকার করতেন। রাতে তার ঘরের ভেতর থেকে গুলির শব্দ শুনেছি। এ ঘটনার পর শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ-অবরোধ ও ভাঙচুরের সময় রোহিঙ্গারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘যুবলীগ নেতা খুনের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন সেখানে অবরোধ করেছে। পরে পুলিশ সেটি তুলে নিয়েছে। সেখানে যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেক্ষেত্রে পুলিশ তৎপর রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেছিলো স্থানীয় লোকজন। কয়েক দফা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও’র সাইনবোর্ড, ক্যাম্পের ঘরবাড়ি ও একটি রোহিঙ্গা দোকানে ভাঙচুর চালায় তারা। ২৭ নম্বর ক্যাম্পে সেইভ দ্য চিলড্রেনের একটি কার্যালয়েও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বেলা ১টার দিকে একদল শিশু-কিশোরসহ উঠতি বয়সীদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে লাঠিসোঁটাসহ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় ক্যাম্পে ভাঙচুর না করলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও স্থাপনায় আঘাত করতে দেখা গেছে তাদের।