অভিযোগ নিয়ে গেলে ধমক দেন পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক!

কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসদালাল ছাড়া কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কাজ করতে গেলে সেবাগ্রহীতা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকান হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তির অভিযোগ নিয়ে গেলে ধমকে রুম থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক রাজ আহমেদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দালালরা। তাদের ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে পড়তে হয় হয়রানিতে। কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি দুই দফা অভিযানে বেশকিছু দালালকে আটকসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও সিল, ভুয়া সনদ, সিল মারা কাগজপত্র। তবে পাসপোর্ট অফিসকে দালালমুক্ত করার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

পাসপোর্ট করতে এসে বিড়ম্বনায় পড়া একজন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “১৬ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফরম জমা দিতে গেলে ‘ঠিকমতো পূরণ হয়নি’ বলে মোশারফ হোসেন নামে এক কর্মকর্তা আমাকে ফিরিয়ে দেন। পরদিন (১৭ সেপ্টেম্বর) কাগজপত্র জমা দিতে গেলে ফরমে ভুল আছে বলে ওই কর্মকর্তা আবারও ফিরে যেতে বলেন এবং ইঙ্গিত করেন বাইরে লোক আছে (দালাল), তাদের কাছে যান। ১৮ সেপ্টেম্বর ফরম ও কাগজপত্র নিয়ে জমা দিতে গেলে জানান জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি লাগবে। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপিসহ জমা দিতে গেলে সহিদুল ইসলাম নামে আরেক কর্মকর্তা জানান বাইরে লোক মারফত জমা দিন। না হয় ফরম জমা হবে না এবং আপনি পাসপোর্টও পাবেন না। সব কাগজপত্র ঠিক আছে বললেও ওই কর্মকর্তা কোনও কথা শোনেননি।”      

কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালকতিনি আরও বলেন, ‘পরে বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক রাজ আহমেদের রুমে অভিযোগগুলো জানাতে গেলে, তিনি আমাকে পাসপোর্ট অফিস হতে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে অভিযোগগুলো বলার পরও তিনি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ধমকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে রুম থেকে বের করে দেন।’     

মাহবুবুর বলেন, নানা বিড়ম্বনার পর কর্মকর্তার হাতে লাঞ্ছিত হয়ে বিষয়টির সমাধান চেয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি।

আরেক ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান রাব্বি জানান, পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে বলা আছে দালাল নয়, পাসপোর্টের জন্য নিজেই নিজের কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এলে দেখি অন্য দৃশ্য। এখানে কোনও সেবাগ্রহীতার ফরম দালাল ছাড়া জমা হয় না। তিনি তিনদিন গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। পরে বাধ্য হয়ে দালালের আশ্রয় নিতে হয়েছে।

কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি বদরুল হুদা জেনু সেবার জায়গায় সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্র

অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক রাজ আহমেদ বলেন, ‘ধমকিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমার অফিসে কোনও সেবাগ্রহীতা কোনও অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে সেবাগ্রহীতা আপনাদের কাছে অভিযোগগুলো করেছেন, তাকে বলবেন ওই অভিযোগপত্র নিয়ে আমার কাছে আসতে।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির বিষয়ে এক সেবাগ্রহীতা একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখবো।’