সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপের জেটিঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পশ্চিমপাড়া। সেখানে সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনের নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে দেখা যায়। বেশ কয়েজন শ্রমিক প্রবালের টুকরাগুলো দিয়ে বানাচ্ছেন সীমানা প্রাচীর। পাঁচটি কক্ষের মধ্যে দু’টি কক্ষের দেয়াল তোলা হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এভাবে দ্বীপের পশ্চিম, মাঝার ও কোনাপাড়ায় আরও বেশ কয়েকটি দালান তুলতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের পাকা ভবনও রয়েছে। এছাড়া দ্বীপে অবাধে আহরণ হচ্ছে শামুক-ঝিনুক-পাথর।
বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দ্বীপ কর্তৃপক্ষের কাছ অনুমতি নিয়ে দালান নির্মাণ করছি। দ্বীপে শুধু আমি একা এ কাজ করছি না। এখানে আরও অনেকে দালান নির্মাণ করছেন। তাছাড়া এখানে বিশাল ভবন নির্মাণ হয়েছে। এতে দ্বীপের কিছু সমস্যা হয়নি। সামান্য এই দালান নির্মাণ করলে দ্বীপের বড় ক্ষতি হবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ‘দালানের ভারে দিন দিন দেবে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন। ফলে সামান্য জোয়ার পানি বাড়লে দ্বীপের চার দিকে ভেঙে যাচ্ছে। গত দুই বছরে দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, হরা বনিয়া, গলাচিপা, জাদির বিল, কোনাপাড়া, উত্তর বিল, পশ্চিমপাড়া, ডেইলপাড়াসহ ১৫টি জায়গায় দেড় শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে।’
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলেই রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কিছু কর্মকর্তার একটি চক্রকে ম্যানেজ করতে হয়। তাদের যোগসাজশে টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটারের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইট, লোহা, সিমেন্ট, বালুসহ যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছে যায় সেন্টমার্টিনে। সংশ্লিষ্ট দফতর ম্যানেজ থাকায় এসব নির্মাণসামগ্রী নির্বিঘ্নে নির্মাণ স্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনও বাধা ছাড়াই গড়ে উঠছে হোটেল, কটেজ ও রেস্তোরাঁ। আবার অনেক সময় দ্বীপের তিন দিকে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে অবকাঠামো তৈরিতে। সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে দ্বীপে পাকা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং নির্মিত সব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগ। নির্দেশ অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে ছোট কিংবা বড় কোনও স্থাপনাই নির্মাণের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও সেখানে গড়ে উঠছে একের পর এক স্থাপনা।
পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘দুই বছর আগে দ্বীপে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে ওঠা আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ ১০৬টি ভবন ভাঙার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠছে নানা স্থাপনা। এ বিষয়ে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন এ বিষয়ে।’
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে নতুন করে দালানকোঠা নির্মাণের সুযোগ নেই। যারা দ্বীপে এসব কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে। আগে যেসব হোটেল-মোটেল ভাঙার নির্দেশনা ছিল, সেসব হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ আদালতে আপিল করেছে। এজন্য আগের নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা দেখছি আমরা।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফুরকান আহমেদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো কেউ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’