৭৩ কোটি টাকার দুই প্রকল্পের কাজে অনিয়ম: সেতুমন্ত্রীকে এমপি রফিকের ‘ডিও লেটার’

ডিও লেটারের অনুলিপি (ছবি– প্রতিনিধি)

চাঁদপুরে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার দুই প্রকল্প—মুদাফ্ফরগঞ্জ-চিতোষী-রামগঞ্জ ও চাটখিল-চিতোষী-শাহরাস্তি সড়ক নির্মাণের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স-এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে ডেমো অফিসিয়াল (ডিও) লেটার (আধা সরকারিপত্র) পাঠিয়েছেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। ওই লেটারে রানা বিল্ডার্স-এর বিরুদ্ধে দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে মানহীন পোড়া মাটি, ইটের পরিবর্তে ব্যবহার অযোগ্য সুরকি, রাবিশ ও শেওলাযুক্ত পাথর ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়ম না মেনে রাস্তা প্রশস্তকরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

চাঁদপুর সড়ক বিভাগের অধীনে মুদাফ্ফরগঞ্জ-চিতোষী-রামগঞ্জ ও চাটখিল-চিতোষী-শাহরাস্তি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৪ কোটি টাকায় মুদাফ্ফরগঞ্জ-চিতোষী-রামগঞ্জ সড়ক ও প্রায় ৪৯ কোটি টাকায় চাটখিল-চিতোষী-শাহরাস্তি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ দুই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার পাঠান এমপি রফিক; যাতে নির্মাণ কাজের শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিও লেটারে উল্লেখ, মানহীন পোড়া মাটি, ইটের পরিবর্তে ব্যবহার অযোগ্য সুরকি, শেওলাযুক্ত পাথর ব্যবহার ছাড়াও দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে পাথরের বদলে বালির পরিমাণ বেশি দেওয়া, রাস্তা প্রশস্তকরণের ক্ষেত্রে পুকুরের পাশে কোনও ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না রাখা এবং রাস্তা পরিষ্কার না করে পিচ ঢালাই করা, প্রয়োজন অনুযায়ী কার্পেটিং না করার অভিযোগও করা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৮ ফিট করে রাস্তা প্রশস্ত করার নিয়ম থাকলেও রানা বিল্ডার্স-এর বিরুদ্ধে ১৩ বা ১৪ ফিট করে রাস্তা প্রশস্ত করার অভিযোগ করা হয়েছে।

ডিও লেটারে আরও উল্লেখ, মুদাফফরগজ্ঞ-চিতোষী-রামগজ্ঞ মহাসড়কের অংশের ৩টি ব্রিজ (স্বেতীনারায়নপুর মোল্লারদজ্জা সংলগ্ন ব্রিজ, উঘারিয়া পুর্ব বাজার সংলগ্ন ব্রিজ ও কাঁলচৌ গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজ) ভেঙে নতুনভাবে বানানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজগুলো নতুনভাবে তৈরি না করে পুরানো ব্রিজগুলো সামান্য মেরামত করেই কাজ সমাপ্ত করেছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলেও ডিও লেটারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কাজের দায়িত্ব পাওয়ার পর চাটখিল-চিতোষী-শাহরাস্তি সড়কের কাজ করছে রানা বিল্ডার্স। তবে মুদাফ্ফরগঞ্জ-চিতোষী-রামগঞ্জ সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাদল ও জসিম নামের দুই ঠিকাদারকে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে।

এ ব্যাপারে রানা বিল্ডার্স-এর কাজের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান পাখির মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে ঠিকাদার বাদল ও জসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ হয়তো এমপি মহোদয়কে মিসগাইড করেছে এবং ভুল তথ্য দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক নির্মাণে যদি কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে তা সংশোধন করে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া, রাস্তার কাজ শেষে দুই বছর তাদেরই দেখভাল করতে হবে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘পাবলিক যখন লেখে, বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। রাবিশ দিয়ে যদি রাস্তা বানায়, তাহলে তো ওই রাস্তা টিকবে না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্রিজ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা ছাড়া অন্য কোনও সুযোগ এখানে নেই।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর অন্য একটি পত্রে দুই প্রকল্পের বিষয়ে কিছু সুপারিশও করেন এমপি রফিকুল ইসলাম। এতে তিনি উল্লেখ করেন, জলাশয় এলাকায় রাস্তার পাশে গার্ড ওয়াল বা প্যালাসাইড ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, বাজার ও নিচু এলাকার রাস্তায় বিটুমিন ব্যবহার না করে কংক্রিট ব্যবহার প্রয়োজন। দোয়াভাঙ্গা থেকে রেললাইন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ফিট অংশে ১৮ ফিট করে রাস্তা প্রশস্ত না করে আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন।