খাগড়াছড়িতে এক মাসে ৬৫ টন গাঁজা ধ্বংস

গাঁজা-০১আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকায় বেড়েছে গাঁজা চাষ। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। জেলার সব দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় ড্রোন, নিরাপত্তা বাহিনীর পেট্রোলিং এবং গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে জানা যায়, গত এক মাসে ৫৩টি ক্ষেতের আনুমানিক ৬০ থেকে ৬৫ টনের মতো গাঁজা ধ্বংস করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রথম মহালছড়ি উপজেলার দুর্গম কলাবুনিয়া এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ একর জমিতে গাঁজার সন্ধান পায় সেনা সদস্যরা। এখানে প্রায় ৪ কোটি টাকার গাঁজা ধ্বংস করা হয়। প্রথম ঘটনার ১২ দিন পর এ বছরের ২ জানুয়ারি আবারও ৩৫টি গাঁজা ক্ষেতের সন্ধান পায় সেনাবাহিনী। মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম দুল্যছড়াপাড়া ও ধইল্যা কমলচরণ কার্বারিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ একর জমির গাঁজা ধ্বংস করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এই অভিযানে সফলতা আসার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনাবাহিনী গতকাল (বৃহস্পতিবার) উপজেলার দুর্গম কালা পাহাড়ের পাদদেশ রুজুমনিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানেও সন্ধান পায় ১০ থেকে ১৫ একর গাঁজা ক্ষেতের। ধ্বংস করা হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকার গাঁজা।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর কবির বলেন, ‘পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো দুর্গম এলাকার লোকদের জিম্মি করে গাঁজা চাষ করাচ্ছে। সংগঠনগুলোর আর্থিক জোগানের পাশাপাশি অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছে গাঁজা বিক্রির টাকায়।’

গাঁজা-০৫খাগড়াছড়ি জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘গাঁজায় টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনোল (টিএইচসি) আছে। এর প্রভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।’

খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বিধান কানুনগো জানান, গত ৫ বছরে প্রায় ২০০ গাঁজা সংক্রান্ত মামলা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাহাড়ে গাঁজা চাষ ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। গাঁজা চাষ বন্ধে এবং চাষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, ‘গাঁজা চাষ পাহাড় থেকে নির্মূল করতে মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হবে। গাঁজা উৎপাদন, সেবন, পরিবহন ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’