নাসিরনগরে সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর, বিকল্প পন্থায় পূজা করলেন শিক্ষার্থীরা

01ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজার আগেই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্প পন্থায় তিথি ছাড়া (পঞ্চমী তিথি শেষ হয়ে যায়) পূজার আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ডিগ্রি কলেজের সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীসহ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

পূজার আয়োজক চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জয় রায় বলেন,  বুধবার রাতে কলেজের নিচতলায় একটি কক্ষে পূজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়।  সকালে তিথি লগ্নে পূজা হওয়ার কথা থাকলেও খবর পাই, আমাদের সব আয়োজন নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে কলেজে এসে দেখি সরস্বতী প্রতিমা ভাঙা, সাজানো প্যান্ডেল লণ্ডভণ্ড।

সঞ্জয় রায় আরও বলেন, এসব দেখে সহকর্মীদের ফোন দেই। তারা প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পেয়ে দ্রুত কলেজ ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন।

সঞ্জয় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এটি আমাদের অস্তিত্বের ও ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

একই বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রুতি সাহা বলেন, কলেজে আমরা অনেক আশা নিয়ে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছিলাম। কিন্ত পূজার আগে প্রতিমা ও প্যান্ডেল ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারছি না।

শ্রুতি সাহা আরও বলেন, আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় পূজা করেছি তবে তিথি লগ্ন শেষ হওয়ার পর। এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমরা এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক সুরঞ্জিত দাস ও কম্পিউটার সাইন্সের নরেন্দ্র সূত্রধর জানান, কলেজের
প্রতিমা রাখার রুমে গিয়ে দেখি প্রতিমার মাথা ভাঙা। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষকে জানালে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে ভাঙা প্রতিমা সংরক্ষণ করে একটি আলাদা রুমে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

কলেজ শিক্ষক সুরঞ্জিত দাস বলেন, শিক্ষার্থীরা বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সরস্বতী প্রতিমা সাজিয়ে রেখে চলে যায়। সকালে পূজা অর্চণার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসে তারা দেখেন প্রতিমা ভাঙা, প্যান্ডেল এলোমেলো।

এ ব্যাপারে চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমর আলী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই মর্মাহত। খবর পাওয়ার পরপর পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক  নতুন প্রতিমা এনে পূজার ব্যবস্থা করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ ওমর আলী বলেন, ‘কলেজের নিচতলার জানালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা বাঁশ দিয়ে আঘাত করে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।’ 

কলেজের নৈশপ্রহরীর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নৈশপ্রহরী তখন দোতলায় অবস্থান করছিলেন। তিনি বিষয়টি কেন দেখতে পাননি এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কলেজের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা (মামলা) নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রঞ্জন কুমার বলেন, ‘প্রতিমা ভাঙার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পূজা শেষে এ ব্যপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কবীর আহমেদ বলেন, ‘চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি।