ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে আমরা কাছে মনে হয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেনি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি।’
অন্যদিকে, ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল ইসলাম দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রিট আদেশের যোগসাজশ আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সাজানো হয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—ওয়াসা ভবনে আগুন পরিকল্পিত নাকি নিছক দুর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর ওয়াসার মোড় এলাকায় ওয়াসা ভবনের তৃতীয় তলার ওই কক্ষে আগুন লাগে। প্রায় একঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে অফিসের কাগজপত্র, কম্পিউটার ও টেবিল পুড়ে দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক আলী আকবর। ঘটনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পুড়ে যাওয়ার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে ফায়ার সার্ভিস এই বক্তব্য থেকে সরে এসেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমদ। ওই সময় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটার সম্ভাবনা কম। কারণ, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে যদি আগুনের সূত্রপাত ঘটতো, তাহলে ওই কক্ষে থাকা বিদ্যুতের তারগুলো সব পুড়ে যেতে। আগুন পুরো কক্ষে ছড়িয়ে পড়তো। কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনে এসে আমরা সেটি দেখিনি। ওই কক্ষের বৈদ্যুতিক তারগুলো পুরোপুরি পুড়ে যায়নি। আগুনে ওই কক্ষে থাকা দুটি কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই দুটি কম্পিউটারের মনিটর ঠিক আছে, সিপিইউ থেকে আসা মনিটরের সঙ্গে লাগানো তারটি পর্যন্ত অক্ষত আছে। কিন্তু কম্পিউটারগুলোর সিপিইউসহ হার্ডডিস্ক পুরোপুরি পুড়ে গেছে। তাই আমরা ধারণা করছি, অন্য কোনোভাবে এই কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো।’
এদিকে, এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংস্থাটির শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম। তার দাবি, ওয়াসার ওই কক্ষে আগুন লাগার বিষয়টি রহস্যজনক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ওই কক্ষে পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ওই কক্ষে ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের কাগজপত্র ছিল, ওই ডকুমেন্টগুলো ধ্বংস করতেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। কারণ, ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ভবনে আগে কখনও অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে ওয়াসার এমডির দুর্নীতির বিষয়ে হাইকোর্টের রিট আদেশের যোগসূত্র আছে। রিটের আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে অফিসের তৃতীয়তলায় আগুন লাগার ঘটনা রহস্যজনক। সুষ্ঠু তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য ফিল্ম স্টাইলে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে।’
ঠিক কীভাবে ওই কক্ষে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নিজেও সেটি জানে না। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ইতোমধ্যে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ।
এ সম্পর্কে জানতে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওই কক্ষে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প, মদুনাঘাট প্রকল্পসহ বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের সব কাগজপত্র ওই কক্ষে ছিল।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর কাগজপত্র ওই কক্ষে ছিল। আমরা কাগজপত্রগুলো কম্পিউটারেও সংরক্ষণ করতাম। তাই পুড়ে যাওয়া কাগজপত্রগুলো উদ্ধার করা খুব কঠিন হবে না।’ কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পুড়ে যাওয়ায় কম্পিউটারে থাকা তথ্যগুলো কীভাবে পাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিল অনুমোদনের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র অ্যাকাউন্ট সেকশনে এক সেট দিতে হতো। সেখানে ডকুমেন্টগুলো সংরক্ষিত আছে। তাই ডকুমেন্টস নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়তে হবে না।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে হাসান আলী নামের এক গ্রাহক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।