উদ্বোধনের অপেক্ষায় পার্বত্য অঞ্চলের প্রথম স্থলবন্দর

 

পার্বত্য অঞ্চলের প্রথম স্থলবন্দর

খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকায় পার্বত্য অঞ্চলের প্রথম স্থলবন্দরটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই স্থলবন্দরটি চালু হলে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম দিয়ে বাণিজ্য, পর্যটন, কর্মসংস্থান, আমদানি-রফতানিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ আগামী ৫ জানুয়ারি শেষ হবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা সেতুটি পরিদর্শন করে দ্রুত উদ্বোধন করা হবে স্থলবন্দরটি।

২০১৭ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করে দুই বছরের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা মহামারিতে কয়েক মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ ৩ বছর পর সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সেতু নির্মাণ হওয়ার পরই বহু প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের রামগড়-ভারতের সাব্রুম স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু হবে।

বাংলাদেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর এটি। অন্যদিকে ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সেভেন সিস্টারখ্যাত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে দেখছেন রামগড় স্থলবন্দরটিকে।

ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশচন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় অর্থায়নে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দীর্ঘ ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দুই লেন বিশিষ্ট এক্সট্রা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতুটিতে মোট পিলার রয়েছে ১২টি, এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট ২০২০ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে হেয়াকে-বারৈয়াইয়ার হাট সড়কের জন্য ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।  প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তবে ইতোমধ্যে রামগড় বারৈয়ারহাট সড়কের বেশ কয়েকটি দুই লেন বিশিষ্ট ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রথম স্থলবন্দরজানা গেছে, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত হয়। এরআগে ২০০৯ সালের ১৭ জুন ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার শ্রীমতি মুক্তা দত্ত রামগড়ের মহামুনিতে প্রস্তাবিত স্থলবন্দর ও ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।

রামগড় পৌর মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপন জানান, মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় দুই দেশের সীমান্তবাসীরা আশার আলো দেখছেন। দ্রুত বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ হলে রামগড়বাসীসহ লাভবান হবে পৌরসভা। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মসংস্থান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মাহমুদ উল্যাহ মারুফ বলেন, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা, পর্যটন ও সাংস্কৃতি অঙ্গনের দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবেন। সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে শিগগিরই উদ্বোধনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।