একরাম হত্যার ৭ বছরেও অধরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি

বহুল আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যার সাত বছরেও অধরা রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি। অন্যদিকে রায় ঘোষণার তিন বছর পার হলেও ৩৯ আসামির দণ্ড এখনও কার্যকর হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে আট জন জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যান। অপর ৯ জন ঘটনার পর থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাকি ২২ আসামি জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু কারাগারে রয়েছেন।

জামিনে গিয়ে পালিয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন। শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।

মামলা থেকে খালাস পাওয়া ১৬ জনের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ জানান, রায় ঘোষণার পর কিছু আসামি আপিল করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি হয়নি। যে কারণে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও হচ্ছে না। মূলত করোনা পরিস্থিতির কারণেই রায় কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় প্রকাশ্যে একরামের গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর তাকে বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ বর্বরোচিত এ হত্যা মামলায় ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক ৫৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাসের রায় দেন। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

এর আগে একরামকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৫৬ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দেন।