প্রি-পেইড গ্রাহকের ঘাড়ে ডিজিটাল মিটারের ৩ বছরের বিল

তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আল-আমীন। নিয়মিত রিচার্জ করেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন বলে দাবি তার। তবে চলতি মাসে তাকে ডিজিটাল মিটারের বড় বকেয়ার বিল হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। বকেয়া আছে বলেই বন্ধ করে দেওয়া হয় তার বিদ্যুৎ সংযোগ।

অথচ তিনি বর্তমানে ব্যবহার করছেন প্রি-পেইড মিটার। তিন বছর আগে ডিজিটাল থেকে প্রি-পেইডে মিটারে আসা গ্রাহক আল-আমীন এতে হতবাক! যেই মিটার ব্যবহারই করছেন না, সেই মিটারে বকেয়া হয় কী করে? তার প্রশ্ন, ‘একই কনজ্যুমারে দুই মিটারের বিল আসে কীভাবে?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল-আমীন তার পিতা মহিউদ্দিন খানের হিসাব নম্বরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহার করছেন। তার বিদ্যুৎ বিলের হিসাব নম্বর- ২৩০০-এ এবং কনজ্যুমার নম্বর- ৩৫৪৫৭৩৬৯। নিয়মিত বিল পরিশোধ করছেন আল-আমীন। আগে মিটার ছিলো অ্যানালগ। পরে আসে ডিজিটাল। ২০১৮ সালের ৩ মে থেকে ডিজিটাল সিস্টেম বাদ দিয়ে প্রি-পেইডের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আল-আমীনও পিডিবির গ্রাহক। ডিজিটাল মিটারের রিডিং অনুসারে পিডিবির গ্রাহক হিসেবে আল-আমীন তৎকালীন চার শতাধিক ইউনিট বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পাওনা ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাওনা ইউনিটের টাকা ফেরত তো দূরের কথা, উল্টো আগের ডিজিটাল মিটারের হিসাব নম্বরের বকেয়া দেখিয়ে ১০ হাজার ৩৩২ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। অথচ তিনি তিন বছর ধরে ডিজিটাল মিটারই ব্যবহার করছেন না।

আল-আমীন জানান, পিডিবির নির্দেশে ডিজিটাল মিটার বাতিল করে ২০১৮ সালের ৩ মে প্রি-পেইড সংযোগ নেন। নিয়মিত টাকা রিচার্জ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে কোনও বিলের কাগজপত্রও আসেনি। দীর্ঘ তিন বছর ধরে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন তিনি। সর্বশেষ চলতি মাসের ২ জুন নিজের বিকাশ থেকে ৫০০ টাকা রিচার্জ করেছেন। গত ৯ জুন পিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল মিটারের তার বকেয়া বিল ১০ হাজার ৩৩২ টাকা।

এর পরদিন ১০ জুন আল-আমীনের প্রিপেইড মিটারের হিসাব বন্ধ করে দেয় বিতরণ বিভাগ কর্তৃপক্ষ। ক্ষুব্ধ আল-আমীন কাগজ নিয়ে ছুটে যান বিদ্যুৎ অফিসে। নিয়মিত বিল পরিশোধের রশিদ দেখে থমকে যায় পিডিবি কর্তৃপক্ষ। নিজেদের ভুল স্বীকার করেও তারা কৌশল করে বলেন, ‘বিল দিতে হবে’।

ভুক্তভোগী এ গ্রাহক বলেন, ‘আমার মিটারের বিল নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করলেও বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সুমন মিয়া বলেছেন, দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করলে তিনি কুমিল্লা থেকে সংশোধন করে দিতে পারবেন। অন্যথায় পুরো ১০ হাজার ৩৩২ টাকা দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুল করবে পিডিবি আর মাশুল দেবে আমার মতো গ্রাহক? এটা হতে পারে না। আমি সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।’

এ বিষয়ে সরাইল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) সামির আসাব বলেন, ‘একই কনজ্যুমার নম্বরে প্রি-পেইডের পাশাপাশি ডিজিটাল মিটারের বিল হতে পারে না। আসলে কিছুটা মিসিং হয়েছে। এগুলো আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি। আমরা গ্রাহক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’