কয়েদিকে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ কারারক্ষী বরখাস্ত

কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে শাহজাহান বিলাস (৪৮) নামের এক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে নির্যাতনের ঘটনায় তিন কারারক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করতে কারা অধিদফতরের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন ও ফেনী জেলা কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন মিঠু। কমিটিকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান বিলাস (কয়েদি নম্বর ৭১৫১/এ) ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের দুর্গাপুর গ্রামের আবদুল মিয়ার ছেলে। ডাকাতি ও হত্যা মামলায় ৫৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। গত ২৬ বছর ধরে তিনি কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন। গত ১৫ এপ্রিল তার ওয়ার্ডে তল্লাশি চালায় কারারক্ষীরা। এ সময় ১২ পিস ইয়াবা, এক পুরিয়া গাঁজা, নগদ ৬০০ টাকাসহ কারারক্ষীদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। পরে ১২ মে তাকে কারাভ্যন্তরে কেস টেবিলের সামনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।

সেই জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এ কয়েদির দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছেন কয়েকজন কারারক্ষী। এরপর বিষয়টি তদন্তে গত ১ জুলাই কারা অধিদফতরের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানকে প্রধান করে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে, নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল করার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) কুমিল্লা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চয়ন দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়ার পরদিন শুক্রবার (০২ জুলাই) কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস কারাগারের ব্যারাকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।

কয়েদিকে নির্যাতনের বিষয়ে শনিবার (০৩ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, বিলাসের ওয়ার্ডে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজা, সিগারেট ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। পরে তাকে কেস টেবিলে ডেকে এনে মাদক ধ্বংস ও জব্দ করা টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। এ নিয়ে সে ক্ষুব্ধ ছিলো আমাদের ওপর। এ জন্য তাকে কেস টেবিলে এনে লঘু শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে পেটানোর ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দুই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রেকর্ড করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান শফিকুল ইসলাম খান মুঠোফোনে বলেন, কারা অধিদফতরের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা কুমিল্লা কারাগারে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।