পদ্মা সেতুর মালামাল নিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজের সন্ধান মেলেনি

পদ্মা সেতুর প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন লোহার মালামাল নিয়ে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যাওয়া এমভি হ্যাং গ্যাং-১ নামের জাহাজটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। বুধবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩২ ঘণ্টা পার হলেও জাহাজ ডোবার স্থান শনাক্ত করতে পারেনি কোস্টগার্ড। 

চট্টগ্রাম থেকে মুন্সীগঞ্জে আসার পথে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে সন্দ্বীপ নতুন চ্যানেলের ৪ ও ৫ নম্বর পয়েন্টে ডুবে থাকা একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। এ সময় জাহাজে থাকা ১৩ জন স্টাফকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা। ডুবে যাওয়া জাহাজে প্রায় ১৮ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।

এমভি হ্যাং গ্যাং-১ জাহাজের মাস্টার আল আমিন শেখ বলেন, ‘জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে পদ্মা সেতুর মালামাল নিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় যাওয়ার পথে সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্টিয়ারিং ফেল করে। এ সময় সাগরে ডুবে থাকা আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। আমরা ১৩ জন নাবিক ছিলাম। ১০ জনকে বাড়িতে পাঠিয়েছি। তিন জন সন্দ্বীপ থানায় জিডি করে এখানে অবস্থান করছি।’

আল আমিন শেখ আরও বলেন, ‘মূলত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্টিয়ারিং ফেল করে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জাহাজটি সন্দ্বীপ নতুন চ্যানেলের ৪-৫ নম্বর পয়েন্টে ডুবেছে। জোয়ার এলে জাহাজটি ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। আবার ভাটার সময় পানির ওপরে ভেসে ওঠে। সকালে আমরা সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যেতে পারিনি। আমাদের আরও একটি জাহাজ পদ্মা সেতু এলাকায় মালামাল নামিয়ে এখানে আসতেছে। মালিকপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে ক্রেন পাঠাবে। মাওয়া থেকে খালি আসা জাহাজে মালামাল বহন করে ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে উদ্ধারে যাবো আমরা।’

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন বলেন, ডুবে যাওয়া জাহাজের স্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কোস্টগার্ড। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থান শনাক্ত করা যায়নি।

ভাসানচরের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মংসং মারমা বলেন, সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখনও স্থান শনাক্ত করা যায়নি। ওই চ্যানেলে আরেকটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। সেটি এখনও উদ্ধার করা হয়নি।

কোস্টগার্ডের কন্টিজেন কমান্ডার মো. রুকনউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত জাহাজের অবস্থান নির্ণয় করা যায়নি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নৌকা নিয়ে জাহাজটি খুঁজতেছি আমরা। কিন্তু জাহাজটি পানির নিচে কোথায় আছে, তা দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা নতুন চ্যানেলেই খুঁজতেছি।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নূর আহমেদ বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এখনও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। তবে উদ্ধারকাজ শুরুর চেষ্টায় আছে কোস্টগার্ড।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘জাহাজটি ডুবেছে ভাসানচর থেকে ৮-১০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে। সেখানে আমরা একটি লাল বয়া দিয়ে চিহ্নিত করে রেখেছি। ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারের জন্য কোস্টগার্ডকে বলেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরকম ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের সক্ষমতা নেই বিআইডব্লিউটিএর। জাহাজ ডুবলে মালিকপক্ষকে নদী থেকে তুলে মেরামত করতে হয়। এজন্য এমভি হ্যাং গ্যাং-১ জাহাজ ডোবার ৩২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উদ্ধারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘ডুবে যাওয়া জাহাজটি পদ্মা সেতুর নয়। এটি পদ্মা সেতুর ঠিকাদারের ভাড়া করা প্রাইভেট কোম্পানির জাহাজ। জাহাজে পদ্মা সেতুর মালামাল রয়েছে। মালিকপক্ষকে বিআইডব্লিউটিএ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাহাজটি তোলার জন্য। বিআইডব্লিউটিএর সক্ষমতা নেই জাহাজটি তোলার। তবে মালিকপক্ষ সহযোগিতা চাইলে আমরা করবো। কোনও জাহাজ ডুবলে আমাদের রেকর্ড রাখার জন্য মালিকপক্ষকে চিঠি দিতে হয়। জাহাজ তোলার জন্য ১৫ দিন সময় দিতে হয় তাদের। এরপরও যদি তারা জাহাজ না তোলে তাহলে নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেবো আমরা।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম থেকে পদ্মা সেতুর মালামাল নেওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে স্টিয়ারিং ফেল করে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় এমভি হ্যাং গ্যাং-১ নামের জাহাজটি। আগে ডুবে যাওয়া জাহাজের এলাকা চিহ্নিত করে বয়া স্থাপন করা হয়েছিল। এমভি হ্যাং গ্যাং জাহাজটি পরিচালনা করছে এমজেড শিপিং লাইনস।