একদিনে বাজারে আসছে হাজার মণ ইলিশ, কেজি ১২০০

দেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটে আসছে উপকূলীয় এলাকার ইলিশ মাছ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এ বাজারে আসছে এক হাজার মণের বেশি ইলিশ। তাই চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় মাছ কম ধরা পড়লেও চাহিদা মেটাচ্ছে সাগরর ইলিশ। তবে বাজারে ইলিশের আমদানি বাড়লেও দাম তেমন কমেনি।

সোমবার (২৬ জুলাই) এ বাজারে উপকূলীয় এলাকার ইলিশ প্রতি কেজি ১১০০ টাকা এবং পদ্মা-মেঘনার ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকা দরে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগস্ট মাসে ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে, তখন দাম কমতে পারে।

বড়স্টেশন বাজারে ইলিশ কিনতে আসা হাসানুর রহমান বলেন, ‘ভেবেছিলাম লকডাউনের মধ্যে ইলিশের দাম কম হবে। সে আশায় বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু পুরো বাজার ঘুরে আমি এক কেজি সাইজের পাঁচটি ইলিশ কিনেছি ৬ হাজার টাকা দিয়ে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি।’

আগস্ট মাসে ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে
ইলিশের আরেক ক্রেতা চাকরিজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদপুরের বড়স্টেশন বাজারে ইলিশের দামের ক্ষেত্রে লকডাউনের কোনও প্রভাব পড়েনি। বরং অন্যান্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে। লোকাল মাছ বাজারে খুবই কম। বেশির ভাগই সাগরের। এখান থেকে কিনতে হলে ইলিশ চিনে কিনতে হবে। তা না হলে ঠকার আশঙ্কা রয়েছে।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতিয়া ও সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফিশিং বোট থেকে ঝুড়ি ঝুড়ি ইলিশ তুলছেন শ্রমিকরা। বাজারে তোলার পর শুরু হয় বিক্রির হাঁক-ডাক। বেশির ভাগ মাছ আবার পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের সাগরের ইলিশ প্রতি মণ ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩০ হাজার থেকে ৩৪ হাজার, আর এক কেজি ওজনের প্রতি মণ ইলিশ ৪০ হাজার থেকে ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তদার ইমান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাছের দাম কমেছে এটি বলা যায় না। এখনও মাছের দাম একটু বেশিই। তবে এখন লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতা কম। তা না হলে ইলিশের দাম আরও বেশি থাকতো।’ লকডাউন উঠে গেলে দাম আরও বাড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

chandpur pic (2) (2)

তিনি আরও বলেন, ‘আগস্টের শুরু থেকেই ইলিশের আমদানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারে যখন ২ থেকে ৩ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হবে তখন ইলিশের দাম আরও কমবে।’

আরেক ব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, ‘সোমবার এই মাছবাজারে উপকূলীয় এলাকার ইলিশ আমদানি হয়েছে প্রায় ১২০০ মণ। লোকাল মাছ আমদানি হয়েছে প্রায় ৫০ মণ। সাগর অঞ্চলের ইলিশের দামের চেয়ে চাঁদপুর নদী অঞ্চলের ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি থাকে সব সময়। বর্তমানে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ছোটগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২৫-২৬ হাজার টাকা। তার চেয়ে একটু বড়গুলো ইলিশ ৩৪ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।’

চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মাছ ব্যবসায়ী মানিক জমাদার বলেন, ‘চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজার হলো ইলিশের ল্যান্ডিং জোন। আমরা দাদন দিয়েছি, তাই চাঁদপুরে ইলিশ আসে। গত পাঁচদিন ইলিশের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। তবে এটি কাঙ্ক্ষিত আমদানি নয়। সামনে আরও বেশি পরিমাণ ইলিশ এখানে আসবে বলে আশা করি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানকার বাজারে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে ছয় মেট্রিক টন ইলিশ আসছে। সাগরে কম্বিং অপারেশন শেষ হয়েছে। এখন জেলেরা সেখানে মাছ ধরছেন। আগামী সপ্তাহ থেকেই ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে। চাঁদপুরের বাজারে পাওয়া ইলিশ শুধু চাঁদপুরেরই নয়, অনেক জেলা থেকেই এখানে ইলিশ আসে।’

তিনি জানান, এবার গত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম। সে কারণে চাঁদপুরের নদী অঞ্চলে ইলিশ কম আসছে।