আড়াই লাখে ইজারা, দিনে আদায় লাখ টাকা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় মেঘনা নদীর দুই তীরের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা সম্প্রতি ইজারা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আড়াই লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে দিনে লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ নৌকার মাঝি, কৃষক-শ্রমিকসহ আশুগঞ্জের পাঁচ গ্রামের মানুষ। এর প্রতিবাদে সম্প্রতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে তারা।

তবে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি তারা। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে সত্যতা পেলে ইজারা বাতিল করা হবে।

গ্রামবাসী জানায়, আশুগঞ্জ উপজেলার পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির কৃত্রিম খাল থেকে উপজেলার তাজপুর পর্যন্ত মেঘনার দুই তীরের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার প্লাবন ভূমি গত ২৪ আগস্ট থেকে ১০ মাসের জন্য ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। ইজারা নেন উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে মো. মহিউদ্দিন মোল্লা। এরপর ইজারা নেওয়া পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও নৌযান চলাচল করলে, ড্রেজার দিয়ে বালু তুললে ও নৌকা চলাচল করলে রশিদ দিয়ে টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন।এতে ক্ষুব্ধ তাজপুর, দূর্গাপুর, বাহাদুরপুর, সোহাগপুর ও সোনারামপুর গ্রামের মানুষ। গ্রামের কয়েকশ মানুষ আশুগঞ্জ মেঘনার তীরে জড়ো হয়ে ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।

তাদের অভিযোগ, ঘাট-পন্টুন এমনকি যোগাযোগের রাস্তা না থাকা সত্ত্বেও মেঘনার প্লাবন ভূমি ও কৃষিজমি ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ইজারা নিয়ে মানুষের পকেট কাটছেন ইজারাদার। অবিলম্বে ইজারা বাতিলের দাবি জানান গ্রামবাসী।

সম্প্রতি মানববন্ধন করে ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী

আশুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আশিকুল ইসলাম মিলন বলেন, মেঘনার দুই তীরের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা দুই লাখ ৫২ হাজার টাকা ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এখন প্রতিদিন দুই পাড়ের মানুষের কাছ থেকে লাখ টাকা জোর করে আদায় করেন ইজারাদার। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে টাকা আদায় করা হয়। এ নিয়ে মানুষের সঙ্গে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এলাকায় বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে এর দায় বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক শহীদ উল্যাহকে নিতে হবে। তার বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ আছে। নদীর তীরের সব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন তিনি। আমরা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো, তাকে যেন দ্রুত অপসারণ করা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বলেন, বেআইনিভাবে বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক কৃষিজমি ও নদীর তীর ইজারা দিয়েছেন। যারা ইজারা নিয়েছেন তারা প্রতিদিন রশিদ কেটে লাখ টাকা আদায় করছেন। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি ইজারা বাতিল করা না হয় তাহলে বড় ধরনের আন্দোলন হবে।

স্থানীয় কৃষক বাহাউদ্দিন বলেন, গত ৩০ বছর ধরে এই জমিতে আমরা হাল চাষ করে ছেলেমেয়ে নিয়ে জীবনযাপন করছি। এখন দুই লাখ ৫২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন ইজারাদার। আমরা নদীতে কাজ করতে পারি না। ইজারাদার এসে টাকা দাবি করেন। আমরা খুবই বিপদে পড়ছি। এখন আমরা আন্দোলনে নামছি। মরলে, মরে যাব। এ জন্য দায়ী হবেন বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক।

স্থানীয় নৌকার মাঝি বাবুল মিয়া বলেন, আমার নৌকার মালিককে দেওয়ার জন্য একটা রশিদ দিয়ে গেছেন ইজারাদারের লোকজন। এক নৌকায় ৬-৭ হাজার ফুট বালু নিতে পারি। প্রতি ফুটে ২৫ পয়সা করে হিসাব করে টাকা দেওয়ার কথা বলে গেছেন তারা।

এ বিষয়ে ইজারাদার মো. মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, যেখানে বালু, ইট লোড-আনলোড করা হয়, সেখানে মালামালের নির্দিষ্ট দর দেওয়া আছে। যদি কেউ অভিযোগ করে জোর করে আদায় করা হচ্ছে, সেটা সত্য নয়। বিআইডব্লিউটিএর শর্ত অনুযায়ী ইজারা আদায় করা হয়।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব নৌ-বন্দরের উপ-পরিচালক শহীদ উল্যাহ বলেন, টেন্ডার দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই আমাদের। আমরা এগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। টেন্ডারগুলো তিন জায়গায় হয়। এখানে, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে। যে কেউ ঢাকা থেকেও টেন্ডার নিতে পারেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে লিখিত পেলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তে ইজারার শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পেলে অব্যশই ইজারা বাতিল করা হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো আমরা। অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির প্রমাণ পেলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।