বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। দীর্ঘদিন করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকার পর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে পর্যটন খুলে দেওয়ায় ভ্রমণে আসেন লাখো পর্যটক। এসব পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে নানা শর্ত আরোপ করে সরকার। জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ মাইকিং করলেও মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন পর্যটকরা। সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক পরায় তাদের চরম অনীহা। দিচ্ছেন নানা অজুহাত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক সৌরভ দেব জানান, ‘মাস্ক নিয়ে এসেছিলাম। এখন পানিতে নামবো তাই ফেলে দিয়েছি। পানিতে নামলে তো মাস্কটা ভিজে যাবে। পরে আবার কিনে পরবো।’
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরার বিষয়টি অনীহা নয়। বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি, এজন্য কক্সবাজার ছুটে আসা। এখন স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি কেউ মানছেন না।’
সি-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লাইফ গার্ডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করি। কিন্তু যেসব পর্যটক সৈকতে মাস্ক পরে আসেন তারা ওই মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতেই ফেলে যান। যে কারণে সৈকতের বালিয়াড়ি নোংরা হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করি, বালিয়াড়ি থেকে ব্যবহৃত মাস্কটি তুলে ডাস্টবিনে ফেলার। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।’
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর পাঁচ মাস বন্ধ ছিল রিসোর্ট। এ বছরও চার মাস বন্ধ। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সুযোগ না পেতেই আবার চলতি লকডাউনে আমাদের ক্ষতি পাহাড় সমান। ক্ষতি পোষাতে না পেরে কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে। আশা করেছিলাম এবার সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু, প্রথম দিকে প্রচুর পর্যটক আসলেও এখন আশানুরূপ পর্যটন নেই।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিদিনই সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আগে শুধু নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করলেও এখন বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পর্যটকদের সচেতন করতে মাইকিং, টহলরত মাইকিং, বিচ বাইকযোগে মাইকিং ও পর্যটকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেক পর্যটক সৈকতে আসেন। তারা সবাই নতুন। সবাইকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা সবার দায়িত্ব।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে। তবে এই সপ্তাহে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে আসেননি। তারপরও করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যটকদের সচেতন করতেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটি ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।’