‘আমি বিশ্বাস করতাম কুদ্দুস তুই একদিন ফিরে আসবি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর ছেলে কুদ্দুস মুন্সীকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মঙ্গলের নেছা। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে ১১০ বছর বয়সী মঙ্গলের নেছার সঙ্গে ৮০ বছর বয়সী ছেলে কুদ্দুস মুন্সীর দেখা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে কুদ্দুস মিয়া তার ছেলে এবং ছেলের বউদের নিয়ে বোনের বাড়িতে আসেন। দীর্ঘদিন পর ছেলেকে পেয়ে বৃদ্ধা মা মঙ্গলের নেছা কাঁদতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘কুদ্দুস তুই একদিন ফিরে আসবি, এটা আমি বিশ্বাস করতাম। আল্লাহর কাছে সব সময় এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

৭০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

কুদ্দুস মুন্সীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামে। তার বাবার নাম কালু মুন্সী। তবে বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে কেউ বসবাস করেন না। মেয়ে ঝরনা বেগমের সঙ্গে বাঞ্ছারামপুরে থাকেন মঙ্গলের নেছা। জানা গেছে, কুদ্দুস মুন্সীর সাত বছর বয়সে বাবা কালু মুন্সী মারা যান। ১০ বছর বয়সে মা তাকে লেখাপড়া করাতে নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের পুলিশ সদস্য আবদুল আউয়ালের সঙ্গে রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে যাওয়ার পর হারিয়ে যান কুদ্দুস। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে খুঁজে পাননি আউয়াল মিয়া।

মাকে ফিরে পাওয়ার পর কুদ্দুস মুন্সী বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মতো লালন-পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে বিয়ের পর আমার শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, একদিন মায়ের সন্ধান পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করছি। বাকি জীবনটা মায়ের সঙ্গে থাকবো।’

গত ১২ এপ্রিল আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এমকে আইয়ূব নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুস মুন্সীর ছবি দিয়ে তার হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন। তিনি বলেন, ‘কুদ্দুস মুন্সী হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে আমি আমার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে কুদ্দুস মিয়ার বাড়ির কয়েকজন মানুষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং হাতের কাটা দেখে তাকে শনাক্ত করে। আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ৭০ বছর পর মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন, এজন্য আমি অনেক আনন্দিত।’

received_539889653776117

কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সী বলেন, ‘কোনও দিন ভাবিনি আমার দাদিকে দেখতে পাবো, আমার বাবা তার মাকে ফিরে পাবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহায় হয়েছেন।’

বোন ঝরনা বেগম বলেন, ‘আমার মা সব সময় বলতেন, একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহতায়ালা আমার মায়ের ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি।’

আরও খবর: ৭০ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন কুদ্দুস