প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার টিকাদান ও হাম রুবেলা (এমআর) কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে বরাদ্দ অর্থ থেকে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের প্রধান সহকারী শাহ আলম ও ইপিআই টেকনিশিয়ান নিজাম উদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দফতরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছেন হাসপাতালের মাঠকর্মীরা। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুরাদনগর উপজেলা ২২টি ইউনিয়নের ৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য প্রায় ৩৪ লাখ দুই হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ বিবরণীতে বলা হয়, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উপজেলা সদরের তিনটিসহ মোট ২৫টি দল টিকাদানকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে কাজ শুরু করবেন। কিন্তু এখানে কোনও প্রশিক্ষণ না দিয়েই ‘টিকাদানকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন’ মর্মে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা টিকাদান কর্মসূচি ও এমআর ক্যাম্পেইনসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের জন্য ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭০ টাকা বরাদ্দ আসে। ওই টাকা খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করেছেন দুই কর্মকর্তা। ফলে হাসপাতালে কর্মরত নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা প্রশিক্ষণের ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ৫৪ জন মাঠকর্মী স্বাক্ষরিত কাগজ অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান সহকারী শাহ আলম গত ১৩ বছর ধরে এই হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসক, নার্স ও মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীসহ কেউ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও যোগদান, বদলিসহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজে তার কাছে গেলে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। মাসে মাসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কমপ্লেক্সের এক আয়া আট বছর ধরে কর্মস্থলে না এসেই বেতন-ভাতা তুলছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ইপিআই টেকনিশিয়ান নিজাম উদ্দিন মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) নাজমুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

প্রধান সহকারী শাহ আলম বলেন, ‘হাসপাতালের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া কেউ এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে কিছুই জানতে চায়নি।’

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল আলম বলেন, ‌‘কোনও ধরনের দুর্নীতির বিষয়ে আমার জানা নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাচ্ছি, হাসপাতালের দুই জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই এখন কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’