প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এই ২২ দিন মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে নদীতে দিনরাত চলে অভিযান। এরপরও প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইলিশ ধরেছেন জেলেরা। নিষিদ্ধ সময়ে ধরা এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) আনা হয় বাজারে। দেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছ বাজারে নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দিনেই এসেছে প্রায় এক হাজার মণ ইলিশ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব মাছের বেশিরভাগই বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
বড়স্টেশন মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘাটে আসতে থাকে বেশ কিছু স্টিলবডি ইলিশভর্তি ট্রলার। এগুলো থেকে ঝুড়িভর্তি ইলিশ বাজারে তোলেন শ্রমিকরা। ঘাটে তুলে সে সব মাছ বিক্রি করা হয়। তুলনামূলক নরম মাছগুলো কম দামে বিক্রি করে দেন ব্যবসায়ীরা। আবার প্যাকেটজাত করে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় এসব ইলিশ।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, বাজারে যে ইলিশ এসেছে সেগুলোর গুণগত মান তেমন ভালো না। এগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষণ করা ইলিশ। তাই দেখে শুনে না কিনলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বড়স্টেশন মাছ বাজারের আড়ৎদার ইমান হোসেন গাজী জানান, নিষেধাজ্ঞার আগের চেয়ে মঙ্গলবার ইলিশের দাম কিছুটা কম। এ বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিমণ ইলিশের দাম পড়েছে ৪৬ হাজার টাকা। আটশ’ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৪০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর সাতশ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ৭০০ টাকা এবং প্রতিমণ ২৮ হাজার টাকা দরে এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার টাকা দরে।
বড়স্টেশন মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবে বরাত সরকার বলেন, আজ যে মাছ বাজারে এসেছে সেগুলোর বেশিরভাগই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ। গত রাত থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। অধিকাংশ মাছই বড় এবং ছোট। মাঝারি সাইজের ইলিশ নেই বললেই চলে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, পদ্মা-মেঘনার জেলা-উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ জেলা মৎস্য ও উপজেলা মৎস্য যৌথ বা এককভাবে এ পর্যন্ত ২৭৮টি অভিযান ও ৯৫টি মোবাইল কোর্টসহ মোট ৩৭৩টি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রায় এক কোটি আট লাখ মিটার জাল আটক করা হয়। যার মূল্য ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকারও বেশি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধনের অপরাধে চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর ও হাইমচরের ২১৮ জন জেলেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে জেলা মৎস্য অধিদফতর ১০৮টি মামলা করে। এছাড়াও ২২ দিন জেলা টাস্কফোর্স ১৮৯১ বার আড়ৎ, ৬১৩ বার বাজার ও ২৬৫ বার মাছঘাট মনিটরিং করেছে। অভিযানে জব্দকৃত নৌকা নিলামে বিক্রি করে ১৯ লাখ টাকা আয় হয়েছে বলে জানান তিনি।