মাহাদী জে আকিবের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয় মানুষের সেবা করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন আকিব। কিন্তু কলেজের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় আকিব আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসক বলছেন, শক্ত কোনও কিছুর আঘাতে তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ অবস্থায় অপারেশন করে মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটি আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে। এ কারণে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আকিবের মাথার ব্যান্ডেজে বিপজ্জনক চিহ্ন এঁকে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’।
আকিব কুমিল্লা জেলা স্কুলের শিক্ষক গোলাম ফারুকের দুই সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। গত বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ক্যাম্পাসে একা পেয়ে প্রতিপক্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালান আকিবের ওপর। এতে আকিব মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। এরপর দীর্ঘ সময় নিয়ে তার মাথার অপারেশন করেন চিকিৎসকরা।
আকিবের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইসিইউতে আকিবের চিকিৎসা চলছে। শক্ত কিছুর আঘাতে তার মাথার ডানপাশের একটি হাড় ভেঙে গেছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে আমরা সেটি অপসারণ করে পেটের মধ্যে রেখেছি। কিছুটা সুস্থ হলে আমরা সেটি আবার পুনরায় আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করবো।’
এখন আকিবের অবস্থা কেমন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আকিবের জ্ঞান ফিরছে। সে এখন কিছুটা শঙ্কামুক্ত। আশা করছি, সে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। এই আঘাতের কারণে স্মৃতি হারানোর মতো কোনও ঘটনা ঘটবে না। তবে মাথার অপারেশন করা অংশে যদি এখন কোনওভাবে আঘাত পায়, তবে তার ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। কেউ যাতে তার মাথা স্পর্শ না করে সেজন্য অপারেশনের ব্যান্ডেজে লিখে দিয়েছি, “হাঁড় নেই, চাপ দেবেন না”।’
এদিকে ছেলের এই মুমূর্ষূ অবস্থা দেখে হতবাক আকিবের বাবা কুমিল্লা জেলা স্কুলের শিক্ষক গোলাম ফারুক। মেডিক্যাল কলেজের মতো এমন একটি বিদ্যাপীঠে এ ধরনের সংঘাত তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
গোলাম ফারুক বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনা ভিন্ন। এখানে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হতে পড়াশুনা করে। তাদের পড়াশোনার উদ্দেশ্যই থাকে অন্যের সেবা করা। সেখানে এভাবে ছাত্ররাজনীতির দলাদলিতে ছাত্ররা মারামারি করবে, এটা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। মেডিক্যাল কলেজে ছাত্ররাজনীতি থাকবে। তবে সেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে কেন? ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে কারও হাতের পুতুল হতে হবে কেন?’
ছেলের সুস্থতার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে গোলাম ফারুক বলেন, ‘আকিব খুব মেধাবী ছিল। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়ার পর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবে। গরিব মানুষের সেবা করবে। সেই অনুযায়ী গত বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু আজ সে নিজেই জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে। মাথায় যেভাবে তাকে আঘাত করা হয়েছে তাতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি, না জানি এর প্রভাবে তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া, তিনি যেন আকিবকে আগের মতো সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’ তিনি আকিবের সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
আরও খবর: চট্টগ্রাম মেডিক্যালে সংঘর্ষ: ২ ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার