অধ্যক্ষ এমদাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে কমিটি

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. একেএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা ও নিয়মবহির্ভূত খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা করা কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের করা তদন্ত প্রতিবেদন সদর আসনের সংসদ সদস্য বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। 

তদন্তে ভর্তিতে অনিয়ম ও জালিয়াতি করে এক কমিটির বদলে আরেক কমিটি দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত পরিচালনাকালে বোর্ডের এক কর্মকর্তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন অধ্যক্ষ। তদন্তে এই অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজে ২০২০ সালে প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তির বাইরে গিয়ে ২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অতিরিক্ত ১০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে অতিরিক্ত পাঁচজন এবং নবম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় অতিরিক্ত পাঁচজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়টি আলোচনায় এলে তথ্য গোপন করার উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ নতুন কমিটি গঠন করেছেন এবং তদন্ত কমিটির সামনে কমিটির সদস্যদের উপস্থিত করেছেন। 

আরও পড়ুন: এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ! 

ষষ্ঠ শ্রেণিতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর ভর্তির অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণের জন্য মেধা তালিকায় ১০ জন শিক্ষার্থীর অবস্থান অধ্যক্ষ প্রদর্শন করেননি। অতিরিক্ত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে দৈনিক হাজিরা শিট তৈরি করে তদন্ত কমিটিকে সরবরাহ করা হয়েছে। কলেজে তদন্ত চলাকালে অধ্যক্ষের দাম্ভিকতাপূর্ণ রুঢ় ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ একজন কর্মকর্তার আচরণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ভর্তি বিজ্ঞপ্তির বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর ভর্তির বিষয়টি গোপন করার উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ মিথ্যা ডকুমেন্ট তৈরি করে তদন্ত কমিটিকে সরবরাহ করেছেন। এমতাবস্থায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, তদন্ত চলাকালে ভর্তি কমিটির তালিকা চায় তদন্ত কমিটি। সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ফাহিমা আক্তার এবং সদস্য হিসেবে জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক জগলুল ইসলাম পাটোয়ারী ও করণিক কাম মুদ্রাক্ষরিক মো. আলী মোর্তজার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি জানতে পারেন, এই কমিটি ভুয়া। মূলত ভর্তি কমিটিতে ছিলেন আহ্বায়ক অর্থনীতি বিভাগের নার্গিস আফরোজ, সদস্য ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক রহমত উল্লাহ ও রসায়ন বিভাগের সাইফুর রহমান।

তার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত ভর্তি ও ভুয়া কমিটি করা ছাড়াও ভুল অভিযোগ দিয়ে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ ও নারী সহকর্মীদের অসময়ে ফোন করে বিরক্ত করার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ড. এ কে এম এমদাদুল হক বলেন, স্কুল পর্যায়ে ক্লাস নেওয়ার মতো শিক্ষক নেই, তাই কিছু খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়েছি। কলেজের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি দল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনও শিক্ষকের বেতন বাতিল করার ক্ষমতা রাখি না। এছাড়া নিয়মের বাইরে কোনও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নারীঘটিত অভিযোগও ভিত্তিহীন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুস ছালাম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন এবং ভুয়া কমিটি প্রদর্শন করেছেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি।