X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ! 

কুমিল্লা প্রতিনিধি
২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:০৫আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৫

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. একেএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা ও নিয়মবহির্ভূত খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ড. এমদাদুল হক অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর। এরপর ২০১৭ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮৫ আসনের বিপরীতে বিধিবহির্ভূতভাবে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। ২০২১ সালের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ৮৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি করিয়েছেন ৯৫ জন। একইভাবে ২০১৮ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় ৯৬ জন। এ ছাড়া প্রতি বছরই সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। 

এদিকে ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে তিনি কয়েকজন নারী সহকর্মীর সঙ্গে আপত্তিকর ও অশোভন আচরণ করেছেন। এডহক নিয়োগের আগে ডোপ টেস্টের সময় তিনি এক নারী সহকর্মীকে বলেন, ‘আপনি তো কুমিল্লা ক্লাবে যান, ডোপ টেস্টে আপনার পজিটিভ আসতে পারে’। শিক্ষক পরিষদের এক সভায় তিনি নারী সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনারা তো আপনাদের জামাইদের পিটান’। রাত ১১টার পর গুরুত্বহীন বিষয়ে ফোন করে বিব্রত করেন। 
 
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য দিয়ে ১৫ জন শিক্ষকের ১৯ মাস ধরে বেতন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে কলেজ শিক্ষকরা ভুল তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত বেতন নিচ্ছেন মর্মে একটি চিঠি দেন এমদাদুল হক। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেয়। ১ জুন মন্ত্রণালয় কোনও যাচাই-বাছাই না করে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দেয়। হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জেলা অ্যাকাউন্টস অফিসকে চিঠি দিয়ে বেতন নির্ধারণে কোনও ভুল হলে তা সংশোধন করে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বলে। 

জেলা অ্যাকাউন্টস অফিস কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে শিক্ষকদের ফিক্সেশন (অনলাইনে বেতন নির্ধারণ প্রক্রিয়া) বাতিল করে। এ নিয়ে ওই শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করলে বেতন বন্ধ এবং ফিক্সেশন বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ দেন ও রুল ইস্যু করেন হাইকোর্ট।  

প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এডহক নিয়োগের পর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হলে অধ্যক্ষ আর্থিক সুবিধা দাবি করে বলেন, ‘আপনাদের আমি পে-প্রটেকশন পাইয়ে দেবো, আমাকে কী দিবেন?’ শিক্ষকরা তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নিয়োগপত্রে উল্লিখিত জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০-এর বিধি-০৩-এ বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে বেতন নির্ধারণ করেন। যাচাই-বাছাই শেষে কুমিল্লা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস তা গ্রহণ করে। 

এতে অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হন এবং আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে শিক্ষকদের বিধিবহির্ভূতভাবে প্রারম্ভিক ধাপে বেতন নির্ধারণ করতে বলেন। তার নির্দেশ মতো কাজ না করলে শিক্ষকদের দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। পরে মাউশির বাজেট শাখায় অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য-সংবলিত লিখিত অভিযোগ করে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেন তিনি।

এ ছাড়া অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে পরামর্শ না করে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোর অভিযোগ উঠেছে এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি ৬ জন শিক্ষক দিয়ে খণ্ডকালীন ক্লাস করাচ্ছেন। অন্যান্য সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও পরীক্ষা নিয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক নেওয়া হলেও এবার সব প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে পছন্দমতো শিক্ষক নেন তিনি। গত ১৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পান এবং এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে ড. এমদাদুল হক বলেন, ‌স্কুল পর্যায়ে ক্লাস নেওয়ার মতো শিক্ষক নেই, তাই কিছু খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়েছি। কলেজের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি দল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনও শিক্ষকের বেতন বাতিল করার ক্ষমতা রাখি না। এ ছাড়া নিয়মের বাইরে কোনও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়নি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নারীঘটিত অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাজমা আশরাফী জানান, অতিরিক্ত ভর্তি নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। সহকর্মীদের প্রতি অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরী জানান, ‘শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। অন্যান্য যে অভিযোগ উঠেছে, তা যদি সত্য হয়, তবে এগুলো করা ঠিক না। একজন অধ্যক্ষ এসব করতে পারেন না।’

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুস ছালাম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন তিনি। যেহেতু এখনও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি, তাই বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।

/এসএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ৭ লাখ টাকা গায়েব
বাড়ি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে ছুরিকাঘাত
মহাসড়কে ছিনতাই করা দুই পুলিশ রিমান্ডে
সর্বশেষ খবর
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা